অভিবাসী আর শরণার্থী ইস্যুতে উত্তাল ইউরোপের অভিবাসন বিষয়ক আইনে আসছে বিরাট পরিবর্তন। বদলে যেতে পারে ঐতিহাসিক সেনজেন এবং ডাবলিন চুক্তি। ইউরোপের পথে নৌকাডুবি আর ভ্যানে শরণার্থী আর অবৈধ অভিবাসীদের লাশ পাওয়ার পর থেকে ওই সংক্রান্ত আইন নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ইইউ।
আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসা অভিবাসীদের কোটা ভিত্তিতে আশ্রয় দেয়ার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ। এ পদ্ধতিতে উত্তর-পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ আপত্তি জানিয়ে বলেছে, এর ফলে অভিবাসীরা যে দেশে যেতে চায় না সেখানে তাদের পাঠানো হতে পারে।
সেনজেন এবং ডাবলিন চুক্তি অনুযায়ী অভিবাসীরা যেখানে প্রথম তালিকাবদ্ধ হয় সেখানেই তাদের অবস্থান করা উচিৎ। কিন্তু অভিবাসী ও শরণার্থীরা তাদের পছন্দমতো দেশে যাবার চেষ্টা করছে এবং ইইউভুক্ত অনেক দেশ কিছুটা নিয়ম ভেঙে অনেকটা পুশইন-পুশব্যাক করার চেষ্টা করছে তাদের। কারণ, সেনজেন চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপের ২৬ টি দেশের মধ্যে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো ভিসা লাগে না।
বিষয়টি নিয়ে ইউরোপে অবস্থানরত অভিবাসী-শরণার্থী বিষয়ক গবেষক আমিনুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ডাবলিন চুক্তি এখন আর সেই অর্থে কার্যকর নেই। হাঙ্গেরি থেকে যে সব শরণার্থী যাচ্ছে জার্মানিতে, তাদের তো ডাবলিন চুক্তি অনুযায়ী হাঙ্গেরিতে আবেদন করার কথা। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। তারা জার্মানিতেই যেতে চাচ্ছে আর জার্মানিও ওদের নিচ্ছে না। এরকম অবস্থা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে।
ডাবলিন চুক্তি হয়েছিলো ১৯৮৫ সালে। এই চুক্তির আওতায় সীমান্ত উন্মুক্ত করা আর কাষ্টমস সুবিধা বাড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু এই চুক্তির ফলে ইইউ’র দেশগুলোর সীমান্তে নূন্যতম কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেওয়ায় আইনের ফাঁক-ফোকর গলে অপব্যবহার শুরু হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগামী বৈঠকে এই আইনের সংস্কারসহ বাতিল হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা দেখছেন আমিনুল ইসলাম।
ডাবলিন চুক্তির মতো সেনজেন চুক্তিতেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়ে আমিনুল বলেন, সেনজেন চুক্তি হয়তো অতো সহজে বাতিল হবে না। কিন্তু এটি নিয়ে জোর আলোচনা হবে বলে আমার মনে হয়। কারণ এটি অনেক বড় চুক্তি আর সবাই মেনেও চলছে। তবে এই চুক্তির আওতায় বর্ডার মুক্ত থাকায় শরণার্থীরা ইচ্ছেমতো যে কোনো দেশে যেতে চাইছে, তারা পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যাওয়ার আশায় নিজ দেশ ছাড়ছে! তাই এর সমালোচনাও চলছে।
সেনজেন চুক্তির প্রধান বিষয়বস্তু হলো ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অবাধ গণ-আদানপ্রদান বাস্তবায়ন করা এবং আইন প্রয়োগ ও বিচার ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা।
হাঙ্গেরি সীমান্তে গোলমালের পর পরই ২৭ আগস্ট অস্ট্রিয়ার সীমান্তে একটি পরিত্যক্ত লরিতে ৭১ অভিবাসীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার একদিন পরেই ২৮ আগস্ট একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে আবারো শিশুসহ ২৬ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া ২৬ জন অভিবাসী সিরিয়া, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক। এছাড়াও ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে ৫’শ অভিবাসীবাহী নিয়ে ২টি নৌকা ডুবিতে প্রায় ২শ অভিবাসীর মৃত্যু হয়। সেখানেও মৃত্যু হয় অনেক বাংলাদেশীর।
এসব ঘটনার পরে নড়েচড়ে বসে ইইউ কর্তৃপক্ষ, সমস্যা যেনো আরো ভয়াবহ না হয়ে ওঠে এবং কার্যকরভাবে এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়, সেজন্য ইইউ’র ২৮ সদস্য রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশেষ বৈঠক।