এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সাইবার নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্যবসা ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত ১.৭৪৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। যা এ অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২৪.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাত শতাংশেরও বেশি।
মাইক্রোসফটের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ফ্রস্ট ও সুলিভানের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
‘এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সাইবার নিরাপত্তা হুমকির সম্যক ধারণা: ডিজিটাল বিশ্বে আধুনিক এন্টারপ্রাইজগুলোর সুরক্ষা’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের লক্ষ্য ব্যবসা ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এ অঞ্চলের সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে সচেতন করা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা কৌশল বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো চিহ্নিত করা।
এ গবেষণায় ব্যবসা ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার (আড়াইশ’ থেকে ৪শ’ ৯৯ জন কর্মী) এবং বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার (৫শ’র বেশি কর্মী) ১৩শ’ ব্যক্তিদের নিয়ে জরিপ করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জরিপ করা অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানে (২৫ শতাংশ) সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কিংবা তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয় অথবা তথ্য নিরাপত্তা লঙঘনের ব্যাপারে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই (২৭ শতাংশ)।
এ নিয়ে মাইক্রোসফট এশিয়ার এন্টারপ্রাইজ সাইবার সিকিউরিটি গ্রুপের ডিরেক্টর এরিক লাম বলেন: প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তাদের গ্রাহকদের সাথে সংযুক্ত হতে এবং তাদের কার্যক্রমের পূর্ণ উপযোগিতা ব্যবহারে ক্লাউড ও মোবাইল কম্পিউটিং সেবা গ্রহণ করছে।
তিনি আরও বলেন: প্রথাগত যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিপক্ষকে অদৃশ্য করার ফলে আক্রমণের নতুন লক্ষ্য তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাশাপাশি, তাদের গ্রাহক সন্তুষ্টি ও সুনাম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে যা সাম্প্রতিক কিছু সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় সুস্পষ্ট।
আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি, সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যতের ডিজিটাল অর্থনীতির সুযোগ গ্রহণে প্রতিষ্ঠানের সম্ভাবনা ও ক্ষমতা হ্রাস করছে।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিরক্ষার পরবর্তী প্রহরী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)
প্রতিবেদনের তথ্য অনুয়ায়ী, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চারটির মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তার সুরক্ষা বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যেই এআই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছে কিংবা করার পথেই আছে।
ডিজিটাল বিশ্বে আধুনিক এন্টারপ্রাইজগুলোর সুরক্ষায় করণীয়
শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা সুরক্ষায় এবং এর রক্ষণাবেক্ষণে প্রতিষ্ঠানগুলোর এইআই প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
এছাড়াও সাইবার হুমকি প্রতিরোধে নিরাপত্তা জোরদারে ধারাবাহিক বিনিয়োগ, ‘বেস্ট-অব-স্যুইট’ সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে দক্ষতা ও উপকরণের সক্ষমতা বাড়ানো, ধারাবাহিক মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করতে বলা হয়।
উল্লেখ্য, এ গবেষণা প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৩টি দেশের- অস্ট্রেলিয়া, চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও থাইল্যান্ড- ১৩শ’ জন উত্তরদাতা অংশগ্রহণ করেন। এ গবেষণায় উত্তরদাতাদের মধ্যে ছিলেন ব্যবসা ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের এমন সব মানুষ যারা তাদের প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা কৌশল সম্পৃক্ততায় যুক্ত। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ ছিলেন ব্যবসাখাত থেকে। যাদের মধ্যে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, সিওও এবং পরিচালকরা। আর ৫৬ শতাংশ ছিলেন যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত থেকে। যাদের মধ্যে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সিআইও, সিআইএসও এবং আইটি পরিচালকরা।