চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তার জামিন বহাল

অর্থ পাচারের অভিযোগের এক মামলায় এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামালকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

তবে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, বিশেষ আইনের এ ধরনের অর্থ পাচারের মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে সতর্ক থেকে সঠিকভাবে বিচারিক মনন প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে অর্থ পাচারের মত গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ জড়িত। এবং এ ধরনের মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলার এজাহার, বাদী-বিবাদী পক্ষের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিসমূহ যথাযথভাবে পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।

এবি ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামালের জামিন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেন।

বেঞ্চের অপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তবে কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রুল যথাযথ ঘোষণা করে ব্যাংকের দুজনকে দেওয়া নিম্ন আদালতের জামিন বাতিল করেন।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তার আদেশে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অর্থ পাচার আইনের ২(ষ) (জ)(৯) (১০) ও ১৩ ধারা পর্যালোচনা করলে এটা কাচের মত পরিষ্কার যে, ম্যাজিস্ট্রেট এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে দুজনকে জামিন দিয়েছেন। তাই জামিন বাতিল করা হল। এবং আসামিদের এক মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হল।আর যদি আত্মসমর্পণ না করে, তাহলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হল।

আজ আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসাদুর রউফ ও শেখ বাহারুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।

আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান রায়ের বিষয়ে বলেন, ‘বৃহত্তর বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে দেওয়া আজকের রায়ের ফলে এটাই দাঁড়াল যে, অর্থ পাচারের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট আসামিকে জমিন দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে মামলার গুনাগুণ দেখে অত্যন্ত সতর্কভাবে জামিন দিতে হবে। আর এ মামলার দুই আসামির জামিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকায় তাদের জামিন বহাল থাকছে। আর এ মামলার অন্য সব আসামিরাও জামিনে আছেন।’

এবি ব্যাংকের ১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ আট জনকে আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং আইনের মামলা করেন। ওইদিন বিকেলে মৎস্যভবন এলাকা থেকে ওয়াহিদুল হক, আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ওইদিনই দু’জনকে জামিন দিয়ে একজন রিমান্ডে পাঠায় আদালত।

এ মামলায় উল্লেখ করা হয় যে, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে ১৬৫ কোটি টাকা এবি ব্যাংকের চট্টগ্রাম ইপিজেড শাখা থেকে দুবাইয়ে পাচার করে এবং পরে তা আত্মসাৎ করে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অর্থ পাচারের ওই ঘটনা ঘটে। তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর দুই ঘণ্টার মাথায় দুই আসামিকে এভাবে জামিন দেওয়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

পরে এ ঘটনাকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে এই দুই আসামির জামিন বাতিলের আবেদন করা হলে গত ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এখতিয়ার প্রশ্নে রুল জারি করেন। গত ২১ মার্চ সে রুলের শুনানি শেষ হলে আদালত ৪ এপ্রিল রায় ঘোষণার জন্য রাখেন। কিন্তু ওইদিন রায় না দিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহত্তর বেঞ্চ রুল শুনানির প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে মামলার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। সেই বৃহত্তর বেঞ্চে ফের শুনানির পর আজ রায় ঘোষণা করা হয়।