আর দশ দিন পর হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২৫ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। এসব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘পরীক্ষার আগে কোনো ধরনের অনৈতিক পথের খোঁজ করবেন না।’ তার মতে, শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পড়াশোনা করে পরীক্ষা দিলেই ভালো ফলাফল করবে।
চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেছেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। কোনো দুর্বৃত্তকে পরীক্ষার সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে না।’ এমন হুমকির পাশাপাশি তিনি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য সবার সহযোগিতাও চেয়েছেন।
মূলত শিক্ষামন্ত্রীর এসব কথা এমন অভিভাবকদের উদ্দেশে; যারা নিজেদের সন্তানকে অবৈধ ও অনৈতিক প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। তাদের ধারণা, পড়াশুনা না করেও পরীক্ষার আগে রাতে পাওয়া কথিত ‘প্রশ্নপত্র’ পড়লেই ভালো ফল করা যায়। আর সেই প্রশ্নপত্রের পেছনে তাদের অবিরাম ছুটে চলার প্রতিযোগিতা দেখে অবাক হতে হয়। যে কোনো উপায়েই হোক না কেন; সেই প্রশ্নপত্র তাদের চাই-ই চাই।
কিন্তু সেইসব অভিভাবকরা ভুলেও চিন্তা করে দেখেন না, নিজের সন্তানকে কত বড় অপরাধের অংশীদার করে ফেললেন তারা। শুধু তাই-ই নয়, এর মাধ্যমেই সেই সন্তানকে দেশ ও জাতির সঙ্গে অপরাধ করার প্রশিক্ষণও দিলেন। কেননা বড় বড় অপরাধীরা এমন ছোট ছোট অপরাধ দিয়েই তাদের জীবনের কালো অধ্যায় শুরু করে থাকে। ইতিহাসে তার অসংখ্য প্রমাণও আছে।
এই অর্থে শিক্ষামন্ত্রী সঠিকই বলেছেন। আমরাও নিশ্চিত করে বলতে পারি, অভিভাবকরা ঠিক হলে তাদের সন্তানরাও এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। কেউ ভুল পথে যাওয়ার সাহস করবে না। আর মানুষের নৈতিক শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠানই হলো তার পরিবার।
প্রতিযোগিতামূলক এ সমাজ ব্যবস্থার আরেকটি কালো দিক দেখিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া কিংবা জিপিএ-৫ পাওয়া জরুরি। কিন্তু তারচেয়েও জরুরি, ভালো মানুষ হওয়া। মানবিকতাবোধ, নৈতিকতাবোধ নিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠা।
আমরা জানি, যে কোনো শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের মধ্যে থাকা নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করা। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করা। কিন্তু এই আসল কথাটাই আমরা বারবার ভুলে যাই।
শিক্ষামন্ত্রী অভিভাবকদের পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, আমরা মনে করি- তাতে সাড়া দিয়ে প্রশ্নফাঁসের মতো গুরুতর অপরাধ থেকে বিরত রাখতে অভিভাবকরা নিজেকে, নিজের সন্তানকে সর্বোপরি সমাজ ও রাষ্ট্রকে মুক্ত রাখতে এগিয়ে আসবেন। কেননা, অনৈতিক পথ ধরে বেশি দূর যাওয়া যায় না।