বিদেশি নাগরিকরা এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করায় নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে অনেক ব্যাংক। সবশেষ চুরিতে হ্যাকাররা এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে যাতে ব্যাংকের সার্ভারে কোনো তথ্য পৌঁছায়নি। কিন্তু ব্যাংকের হিসাব থেকে টাকা চলে গেছে ঠিকই।
গত ৩১ মে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ থেকে দুইজন বিদেশি নাগরিক তিন লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান। বুথ জালিয়াতির এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ব্যাংকিং খাতে। এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনা অবশ্য এটিই প্রথম নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘটেছে।
এসব চুরি প্রতিরোধ করতে আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংককে সতর্ক করেছে। গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বাংলাদেশ ব্যংক থেকে সব ব্যাংকের ডিজিটাল সিকিউরিটি উন্নীতকরণ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান: ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ থাকে। এই বন্ধের সময় যেন কোনও দুষ্টচক্র যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে সাইবার নিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন: এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির ঘটনায় বিভিন্ন বুথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। চুরির পদ্ধতি সম্পূর্ণ অভিনব। যে কার্ড দিয়ে চুরি করা হয়, সে কার্ডের সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। কার্ডগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া জানান: এই চুরিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি বাংলাদেশে একেবারে নতুন। তবে সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমাদের বুথগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথে আমাদের নিজেদের তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তাই ইসলামী ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা চুরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের আইটি সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে ব্যাংকটির জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান: এই মুহূর্তে আমাদের ব্যাংকের সকল নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আশা করছি, ঈদের মধ্যে এটিএম বুথে টাকার কোনো সঙ্কট থাকবে না। পাশাপাশি চুরি হওয়ার বিষয়েও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক।
৩১ মে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে দুইজন বিদেশি নাগরিক তিন লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা কিছু টাকা বুথে ফেলে যান। বিষয়টি বুথের নিরাপত্তারক্ষী ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। সেখানে দুই বিদেশি নাগরিকের টাকা উত্তোলনের দৃশ্য দেখা গেলেও ব্যাংকের সার্ভারে এই টাকা উত্তোলনের কোনও হিসাব জমা পড়েনি। বিষয়টি তাদের সন্দেহ হয়।
শনিবারও দুই বিদেশি নাগরিক আবারো একই বুথে টাকা উত্তোলন করতে যান। তাদের মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ এবং বেশি সময় নেয়ার কারণে নিরাপত্তারক্ষী আশপাশের লোকজন ডেকে জড়ো করেন। বিষয়টি টের পেয়ে দুই বিদেশি নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে আটক ব্যক্তির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরও ছয়জনকে আটক করা হয়।
তবে এর বহু আগে থেকেই বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দেশের অর্ধেক ব্যাংকই এখনও সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। মোট ব্যাংকের ৫০ ভাগ সাইবার নিরাপত্তায় নেক্সট জেনারেশন ফায়ারওয়্যাল (এনজিএফডব্লিউ) সফটওয়্যার স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ব্যাংকে আংশিক এবং ১৫ শতাংশ ব্যাংকে এটি স্থাপন অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। ফলে এই ৫০ শতাংশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়টি ঝুঁকিতে আছে।