নানা রঙের ফুলে সজ্জিত প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউজের একটি কক্ষ। বিছানায় ছিটানো লাল গোলাপের পাপড়ি। নবদম্পতিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বাসর ঘরটি! কিন্তু এখানে কার বিয়ে হচ্ছে? কার বাসর ঘর এটি?
এমন উন্মুখ প্রশ্নের উত্তর জানালেন রাজিব রসুল। অ্যাওয়ার্ড অব অনেস্ট, এক মুঠো ভালোবাসা, টেস্ট, বলতে চাই ভালোবাসি, বিহাইন্ড দ্য স্ক্রিন এবং একটি রঙিন দিনসহ এমন বেশকিছু দর্শক প্রিয় নাটকের পরিচালক তিনি। মাঝখানে একটু বিরতি নিয়ে ফিরছেন নাট্য পরিচালনায়। তবে এবারই প্রথম তিনি ইউটিউবের জন্য নির্মাণ করতে যাচ্ছেন একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি। নাম ‘টাকলু’। বাসর ঘরের দৃশ্যটি মূলত এই স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিরই একটি অংশ!
কিন্তু বিয়ের এতো আয়োজন, বর-কনে কোথায়? একটু চোখ বুলিয়েই পাওয়া গেল বরকে। একেবারে শেরওয়ানী, পাগড়ি পরে অপেক্ষায় আছেন! তাকিয়ে আছেন হাতে থাকা মুঠোফোনের দিকে। মুখ তুলতেই দেখা গেলো, আরে! উনিতো টেলিভিশন নাটকের তুমুল দর্শকপ্রিয় অভিনেতা আ খ ম হাসান! মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে তখনো ইউটিউবে এক নজরে দেখে যাচ্ছিলেন নিজের অভিনীত কোনো নাটকের অংশ বিশেষ!
‘হ্যালো!’ বলতেই মুঠোফোন থেকে চোখ সরালেন। তার এমন বেশভুষার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করা হলো, জীবনে বহু নাটকে আপনাকে বিয়ে করতে দেখা গেছে। এটা আপনার কতো নাম্বার বিয়ে? মনে আছে?
এক গাল হেসে ফেললেন আ খ ম হাসান। হেসেই উত্তর দিলেন, না, এগুলো মনে নেই। জীবনে কতোবার বিয়ে করছি তার ইয়ত্তা নাই! অসংখ্যবার বিয়ে করতে হয়েছে। বলেই আবার হাসলেন! বললেন, এগুলো আমি বড়জোর এক মাস পরেই সব ভুলে যাই। কই বিয়ে করছিলাম, কাকে করছিলাম এগুলো পরে আর মাথায় থাকে না। প্রতিদিন নতুন নতুন ক্যারেক্টারে ঢুকতে হয়। আগের ক্যারেক্টারকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুন ক্যারেক্টারে ঢুকি!
কথায় কথায় চলে আসে একটু সিরিয়াস প্রসঙ্গ। অতিরিক্তি বিজ্ঞাপনের কারণে টেলিভিশনের দর্শক আর আগের মতো নেই, তার উপর ওয়েব ও ইউটিউবে এখন অসংখ্য কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে। যা দেখতে হামলে পড়ছে দর্শক। নির্মাতারাও টেলিভিশনের চেয়ে এখন অনলাইনের প্লাটফর্মগুলোতে কাজ করছেন। নিত্য নতুন কাজ উপহার দিচ্ছেন। কিন্তু এই মাধ্যমটিতে ‘ভিউ’ বিষয়টি থাকায় দর্শকের সামনে লোভনীয় করে কন্টেন্ট প্রস্তুত করতে হয়। কখনো কখনো অশ্লীলতা ও ভাঁড়ামোর আশ্রয় নিতে দেখা যায়। বিশেষ করে আ খ ম হাসানকে বেশীর ভাগ নাটকেই ভাঁড়ামো চরিত্রে কেন দেখা যায়?
এমন প্রশ্নে আ খ ম হাসানের সোজাসাপ্টা উত্তর, ভাঁড়ামি হলে কিন্তু দর্শক সেটা নিবে না। এখনকার দর্শক খুবই ট্যালেন্ট। আর আমরা সব ধরনের দর্শককের জন্যই কাজ করি। একজন দিনমজুরের রুচি আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের রুচি একরকম হবে না। আর্টিস্ট হিসেবে আমি একজন দিনমজুরের জন্যও কাজ করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের জন্যও কাজ করি।
কথা বললেন রাজিব রসুলের ‘টাকলু’ নিয়েও। এই নাটকে তিনি একজন টাক মাথার মানুষ। জীবনে চলতে পথে ‘টাক’ ব্যাপারটা তার জন্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠে, শুধু তাই নয় সমস্ত যোগ্যতা থাকার পরেও টাকের জন্য তিনি বিয়ে পর্যন্ত করতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাকে আশ্রয় নিতে হয় প্রতারণার। পরচুলা লাগিয়ে বিয়ে করেন সুন্দরী এক তরুণীকে। কিন্তু বাসর ঘরে সেই মুখোশও উন্মোচন হয়।
‘টাকলু’ নিয়ে রাজিব রসুল বলেন, মূলত টাক নিয়ে যারা হীনমন্যতায় ভুগেন তাদের জন্যই এই স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটি নির্মাণ করছি। নাটক শেষে তারা একটি বিশেষ সমাধান পাবেন, যা এখনই বলছি না। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিতে আ খ ম হাসান ছাড়াও অভিনয় করেছেন চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে প্রথমা, মম মোর্শেদ, অপু সরকার ও মৌশিখা। সম্প্রতি হাতিরঝিল, প্রিয়াঙ্কা শুটিং হাউজ ও ফার্মগেট এলাকায় সম্পন্ন হয়েছে ‘টাকলু’র শুটিং। বর্তমানে চলছে এর পোস্ট প্রোডাকশন।
নির্মাতা রাজিব রসুল জানালেন, শিগগির একটি ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি।