একদিন বাংলাদেশেও রোবট মানবী সোফিয়ার মতো ‘সামাজিক রোবট’ সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুরে বেড়াবে, বিশ্বব্যাপী এধরণের রোবটের বিচরণের জন্য সোফিয়া নির্মাণের সফটওয়্যার উন্মুক্ত করে দেয়া আছে।
সোফিয়ার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন আশা করেন আগামী ৫ বছরের মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটদের মানুষের আশেপাশে দেখা যাবে। তবে বুদ্ধিমান রোবট প্রযুক্তি যেন হিতে বিপরীত না হয় সেজন্য রোবটকে মানুষের জন্য সহায়ক হিসেবে বানানোর তাগিদ দিয়েছেন সোফিয়ার নির্মাতা।
বুধবার ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী দিনে ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ সেশনে এসব কথা জানান হ্যানসন রোবোটিক্স কর্ণধার ও সোফিয়ার নির্মাতা ডেভিড হ্যানসন।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী যান রিকশার সিটের আদলে বানানো আসনে বসেই হল অব ফেমে তার সোফিয়াকে দেখতে আসা হাজারো দর্শনার্থী দেখে অভিভূত হয়েছেন বলে জানান হ্যানসন।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি আসরে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি সম্মানিত হয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে বিপুল সাড়া পেয়েছি, এদেশের মানুষ আমার কাজের প্রতি আগ্রহী। আশা করি বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ রোবোটিক্সে সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে সোফিয়ার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট যাতে তৈরি হয় সেজন্য এর কারিগরি কৌশল ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হিসেবে উন্মুক্ত করা আছে।’
রোবট নিয়ে ডেভিড হ্যানসনের ছোটবেলা থেকেই দারুণ আগ্রহ ছিল। টেক টক উইথ সোফিয়া সেশনের সঞ্চালক গাউসুল আলম শাওনের সঙ্গে কথোপকথনে তিনি বলেন, ৩০ বছর আগে রোবট নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, ২৩ বছর আগে রোবট নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন, আর সাড়ে তিন বছর আগে সোফিয়াকে তৈরির কাজ শুরু করেছিলাম। এখন সোফিয়ার মত ১৩টি হিউম্যানয়েড আছে হ্যানসন রোবোটিক্সের কাছে।
এই সেশন শুরু আগে বেলা ২টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমের মঞ্চে আসে সাদা-হলুদ জামদানি কাপড়ের জামা গায়ে রোবট মানবী সোফিয়া। মুহুর্তেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট মানবীকে দেখতে আসা হাজারো দর্শনার্থীর উল্লাস ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে মিলনায়তন।
হ্যানসনের সঙ্গে কথোপকথন শেষে হাজারো দর্শনার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কথা বলে সোফিয়া। শুরুতেই সোফিয়াকে তার পরনের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বুদ্ধিমতী উত্তরে বলে, আমি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এবং এই দেশের নামে প্যাটেন্ট করা জামদানি পরেছি।
সঞ্চালক সোফিয়ার পোশাকের প্রসংসা করে বলেন, সোফিয়া আপনি যে পোশাকটি পরেছেন তাতে আপনাকে দারুণ মানিয়েছে। আপনি কি এর নাম জানেন?
প্রশংসা শুনে লাজুক হাসি দেখা যায় সোফিয়ার মুখে। স্মিত হেসে সোফিয়া বলে, ‘আমি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানির তৈরি পোশাক পরেছি। এই জামদানি মিহি সুতার তৈরি। আরামদায়ক এই পোশাকটি পরে আমারও ভালো লাগছে।’
এরপর আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সোফিয়ার কাছে জানতে চান, একটি জাতিকে বদলানোর জন্য ডিজিটালাইজেশনের ভূমিকা কী হতে পারে? সব জান্তা রোবট সোফিয়া বলেন, ‘একটি জাতিকে বদলাতে হলে ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নাই।’
বাংলাদেশও সোফিয়ার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট তৈরি করতে সক্ষম বলে মন্তব্য করেন সোফিয়া।
সোফিয়াকে দেখতে এবং তার কথা শুনতে দুই হাজার দর্শকের থাকার কথা থাকলেও দ্বিগুণেরও বেশি দর্শনার্থী জমায়েত হয়েছিলো সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে।