চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এই শহরের ভবিষ্যৎ কি অস্তগামী?

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় তাবলিগ জামাত কর্মীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করায় দিনভর উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় চলাচলকারীদের যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমায় দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সা’দকে ঢুকতে দেওয়া হলে লাগাতার অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে এই বিক্ষোভ হয়। তবে ভারতের নিজামুদ্দিনের আমির মাওলানা সা’দকে বিমানবন্দর থেকে কঠোর নিরাপত্তায় কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়।

তীব্র জানযটে সৃষ্ট ভোগান্তি নিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ.ই মামুন। “উত্তরা থেকে ধানমন্ডি, যানজটে সাত ঘণ্টা!” শিরোনামের পোস্টটির সাথে কয়েকটি ছবিও শেয়ার করেছেন তিনি।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন,

“ঢাকা শহর প্রতিনিয়ত মরে যাচ্ছে। যে শহর নড়ে না চড়ে না, চলে না বলে না- তাকে মৃত না বলে উপায় কি!

গিয়েছিলাম উত্তরার দিয়াবাড়ি, বিআরটিএ অফিসে, গাড়ির বাৎসরিক ট্যাক্স আর ফিটনেসের টাকা জমা দিয়ে কাগজ সংগ্রহ করতে। যাওয়ার সময় সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো। কাজ শেষ করে দেড়টা দু’টার দিকে বের হয়ে অফিসে ফিরতে গিয়েই বাঁধলো বিপত্তি। দিয়াবাড়ি থেকে এক দেড় কিলোমিটার মাস্কাট প্লাজা, এয়ারপোর্ট রোড। ওইটুকু পথ আসতেই লাগলো এক ঘন্টা। মেইন রোডে উঠে গাড়ি আর চলেই না। বাসের যাত্রীরা বাক্স পেটরা নিয়ে হেঁটেই এগোচ্ছেন গন্তব্যের দিকে। প্রাইভেট কারের যাত্রী আমার সেই সুযোগ নেই। আমি অপেক্ষা করি।

জানা গেল, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় আগত একজন মাওলানার বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে তার বিরুদ্ধবাদী তথাকথিত আলেম ওলামাগণ বিমানবন্দরের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করছেন। আর তার ফল গিয়ে পড়েছে লাখ লাখ যাত্রীর মাথায়। টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ থেকে শুরু করে উত্তরাঞ্চলের বগুড়া রাজশাহী থেকে আসা বাসও দেখেছি আটকা পড়েছে হুজুরদের সৃষ্ট সেই যানজটে।

সময় শেষ হয়, ধৈর্য শেষ হয় কিন্তু অপেক্ষা শেষ হয় না। অগত্যা ঘন্টাখানেক এক জায়গায় বসে থেকে আশুলিয়া মিরপুর বেরিবাঁধ ধরে ফেরার চেষ্টা। কিন্তু ওখান থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়াবাড়ি এবং সম্প্রসারিত উত্তরা আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে বেরিবাঁধে উঠতেই লেগে যায় আরো ঘন্টা দুয়েক। পথ কমে মোটে ২/৩ কিলোমিটার। ওই পথেও দূরাগত বাস ট্রাক, কার, রিকশার দীর্ঘ জটলা। ততক্ষণে ডুবে যায় পৌষের ম্লান সূর্য। শীত জেঁকে বসে পথে, সাথে বালু আর ধুলো। বাসের যাত্রীরা তারই মধ্যে নেমে হাঁটা শুরু করেন। নারী পুরুষ শিশু। যেন আরেক শরণার্থী দল! আমরা সবাই যেন উদ্বাস্তু উন্মূল রোহিঙ্গা শরণার্থী। শীত রাতের অন্ধকারে এই কাফেলা আমাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায়। আর আমি যতদূর চোখ যায়, অন্ধকারে দেখি, জোনাকির মতো দূরাগত গাড়ির হেডলাইট।

বর্ণনা আলস্য লাগে। সেই পথ, যেন সত্যিই শ্লথ কচ্ছপ হয়ে পড়ে থাকে আমাদের সামনে। আমরা সেই কচ্ছপের পিঠে সওয়ার হয়ে পার করি এক লম্বা শীতের রাত।

দুপুর দুটোর দিকে রওয়ানা দিয়ে আমি যখন বাড়িতে এসে পৌঁছাই, রাত তখন প্রায় ন’টা। রাত ন’টায় এসে খেলাম দুপুরের ভাত। এরই মধ্যে আমাকে বাতিল করতে হয়েছে একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান, একটি মিটিং এবং একটি সামাজিক সমাবেশ। আমার ড্রাইভার বলে, এতক্ষণে তো চট্টগ্রাম থেকে চলে আসা যায়!

এই শহরের ভবিষ্যত কি সন্ধ্যার এই সূর্যের মতোই অস্তগামী?”