২০১২ সালের ১২ নভেম্বর আমার জন্মদিনে তিনি বলেছিলেন, ‘এই মেয়ে শোনো।’ উত্তরে জানতে চেয়েছিলাম কিছু বলবেন দাদু? তিনি বলেছিলেন-‘একটা সংযোগ ঘটবে।’ এরপর নীরবে চলে গেলেন এই পৃথিবী ছেড়ে।
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সুভাষ দত্তের ছবি তোলার সুযোগ হয়েছিলো আমার। সুযোগ হয়েছিলো তাঁর কর্ম ও জীবন নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করার। কতো কথা, কতো স্মৃতি। ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি আমাদের ছেড়ে অন্য এক পৃথিবীতে চলে যান। ভালোবাসার জন্য কী কোনো জন্ম বা মৃত্যু দিন প্রয়োজন? সুভাষ দত্তকে ভালোবাসি প্রতিদিন। সুভাষ দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
ষাটের দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচিত মুখ সুভাষ দত্ত। বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর পোস্টার ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি।
১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ রায়ের বহুল আলোচিত ‘পথের পাঁচালী’ দেখে ছবি নির্মাণে দারুণভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন সুভাষ দত্ত। এরপর ধীরে ধীরে সিনেমা নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত হন তিনি।
তবে চলচ্চিত্রে সরাসরি সম্পৃক্ত হন ‘মাটির পাহাড়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই সিনেমায় আর্ট ডিরেকটর ছিলেন সুভাষ দত্ত। এরপরে তিনি এহতেশাম পরিচালিত আলোচিত ছবি ‘এ দেশ তোমার আমার’-এ প্রথম অভিনয়েরও সুযোগ পান।
সিনেমার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর ১৯৬৪ সালে প্রথমবার পরিচালনায় আসেন সুভাষ দত্ত। নির্মাণ করেন নিজের প্রথম ছবি ‘সুতরাং’। এই ছবির মধ্য দিয়ে চিত্রনায়িকা কবরীকে চলচ্চিত্রে ব্রেক এনে দেন তিনি।
‘সুতরাং’ ছবির প্রায় চার বছর পর মুক্তি পায় তার আলোচিত ও প্রশংসিত চলচ্চিত্র ‘আবির্ভাব’। জহুরুল হক ও প্রশান্ত নিয়োগির লেখা কাহিনী নিয়ে ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি সুভাষ দত্ত একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন।
সুভাষ দত্ত জন্মগ্রহণ করেন মামার বাড়িতে। ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়ায় তার জন্ম। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বগুড়া জেলার চকরতি গ্রামে। তবে তিনি বসবাস করতেন ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের নিজ বাড়িতে।