কয়েক মিনিটের ব্যবধানে জন্মগ্রহণ করে জোনাইত এবং রাইয়ান। ঘরে পুত্র সন্তান পেয়ে শাহবুদ্দিন আহমেদ-সালমা পারভিন এবং সিওয়ালি বোরো দুই দম্পতিই বেশ খুশি। ভারতের উত্তর-পূর্ব আসাম রাজ্যে জোনাইত এবং রাইয়ানের বয়স যখন সবে মাত্র তিনে পড়ছে তখনই তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পরে বড় এক আশঙ্কার মধ্যে। কারণ মুসলিম ঘরে জন্ম নেওয়া জোনাইত দেখতে একদম আদিবাসী শিশুর মতো।
জন্মের এক সপ্তাহ পর থেকে আহমেদের স্ত্রী সালমা পারভিনের মনে হতে থাকে তার ঘরে যে ছেলেটি আছে সেটা তার নিজের সন্তান না। তাদের দাবি ২০১৫ সালের ১১ মার্চ ভারতের আসামে মঙ্গলালয়ে সিভিল হাসপাতালে জন্ম নেওয়া বাচ্চাটি পরিবর্তন হয়ে যায় এক আদিবাসী পরিবারের সাথে।
শাহবুদ্দিনের স্ত্রী পারভিন বারবার দাবি করেন, এই বাচ্চা আমাদের নয়। কারণ আমার ডেলিভারির সময় পাশের বেডে ছিল শ্রমশূর এলাকার বোদো আদিবাসী এক মহিলা। আমি মনে করি, আমাদের বাচ্চাটি পরিবর্তন হয়েছে।
শিশুটির ছোট চোখ দেখে পারভিন সন্দেহ করে আমাদের পরিবারে এমন চোখ, মুখমন্ডল কারো নেই। দেখতে ঠিক আদিবাসী শিশুদের মতোই। এই কথা শোনার পর আহমেদ হাসপাতালে যায় এবং ওই দিন হাসপাতালে জন্মানো সমস্ত শিশুর বিবরণ সংগ্রহ করে। হাসপাতাল থেকে তথ্য পায়, ওই দিন পাঁচ মিনিট ব্যবধানে সাতটি শিশু জন্ম গ্রহণ করে। এবং এদের মধ্যে একজন আদিবাসী মহিলা আছে।
এই তথ্যের ভিত্তিতে, আহমেদ দম্পতির বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আদিবাসী দম্পতি, অনিল ও সিওয়ালি বোরোর ঠিকানায় একটা চিঠি পাঠায়। যদি আপনাদের সন্দেহ হয় আপনার ছেলেটি আদল বদল হয়েছে তাহলে আমার নম্বরে ফোন দিয়ে জানাবেন।
কিন্তু অনিল বোরোর পরিবার মনে করে এটা কোন অবস্থায় সম্ভব না। কিন্তু অনিল বোরো ছেলে রাইয়ানকে দেখে পারভিনের নিজের ছেলেই মনে হতে থাকে বারবার। তবে বোরো পরিবারটি প্রতিবারই এই সন্দেহ প্রত্যাখ্যান করে আসছিল।
এরপর বাচ্চা বদলানোর সন্দেহে আহমেদ হাসপাতালের নার্সকে অভিযুক্ত করে। তবে অভিযোগের কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরাই অস্বীকার করে। ২০১৫ সালে আগস্টের দিকে আহমেদ তার স্ত্রী পারভিনের ডিএনএ টেস্ট করে কিন্তু জোনাইতের সাথে তার ডিএনএ রিপোর্টে মিল পাওয়া যায়নি।
ডিসেম্বরের দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এই রিপোর্ট দেখানো হলে তারা আইনসম্মত না বলে রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে।
কিন্তু পরে পুলিশ ইন্সপেক্টর হেমন্ত বারুহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং দুই দম্পতির পরিবারের বাচ্চা বদল ঘটনার তদন্ত করে। বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২০১৬ সালে জানুয়ারিতে কলকাতার একটি ফরেনসিক ল্যাবে দুই দম্পতির রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে তারা এই টেস্ট করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ২০১৭ সালে এপ্রিলে ভারতের গুয়াহাটিতে ফরেনসিক ল্যাবে রক্তের স্যাম্পল দেওয়া হলে, রিপোর্টে বাচ্চা অদলবদলের প্রমাণ পাওয়া যায়।
পুলিশ ইন্সপেক্টর বারুহর তদন্তে আহমেদ দম্পতি এই বিষয়টি আদালতে মামলা তোলে। গত বুধবার আদালত রায়ে নিষ্পত্তি দেয় দুই পরিবারই তাদের বাচ্চাদের নিজের কাছে রাখতে পারবে।
কিন্তু জোনাইত এবং রাইয়ান দু’জনই তাদের পরিবার ছেড়ে যেতে চায় না। এখন দুই পরিবারের আশঙ্কা আদিবাসী জোনাইত হিন্দু হয়েও মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠছে এবং রাইয়ান আদিবাসী রীতি নীতির মধ্যে তার শৈশব কাটাচ্ছে। কিন্তু পরে দুই পরিবারই সিদ্ধান্তে আসে যখন জোনাইত এবং রাইয়ান বড় হবে তারাই ঠিক করবে কোন পরিবারে তারা থাকবে।