বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে বিরল এক ঘটনার জন্ম নিল সোমবার সন্ধ্যায়। সংগঠনটির নেতারা প্রকাশ্যে নারী নেত্রীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করলেন। এতে মারাত্মক আহত হলেন অন্তত ৫ জন নেত্রী। তাদের মধ্যে আবার একজনের ভ্রু’র নিচে অন্তত ১৮টি সেলাই দিতে হয়েছে। সম্ভবত এই ধরনের ঘটনা ছাত্রলীগে প্রথম।
ঘটনার সূত্রপাত সম্মেলন শেষ হওয়ার প্রায় এক বছর পর ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে কেন্দ্র করে। ওই কমিটির পদবঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাই কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে তারা তাদের বক্তব্য জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মানতে চাননি নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া কয়েকজন নেতা। তাই মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে এমন ন্যাক্করজনক হামলা চালান তারা।
একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, একটি সংগঠনের নেতারা নিজেদেরই নারী নেত্রীদের উপর এভাবে হামলে পড়লো। তাও আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গণতন্ত্রের সূতিকাগারে।
এমন ঘটনার পর চারদিকে ছি, ছি পড়ে গেছে। ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান নেতাদের পাশাপাশি অন্যরাও লজ্জা, ঘৃণা, নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মোট কথা, কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একটি সংগঠনের সব সিদ্ধান্তই যে সবাই মেনে নেবে, তা নয়। মতের ভিন্নতা থাকবে, এটাই গণতন্ত্রের অলঙ্ককার। কিন্তু তাই বলে এভাবে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ? তাও আবার নারীদের প্রতি! এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
ঘটনার পর গভীর রাতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে ছাত্রলীগ। কিন্তু রহস্যজনকভাবে এই তদন্ত কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে, তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তার মানে সর্ষের মধ্যেই ভূত! এরই মধ্যে আক্রান্ত এই তদন্ত কমিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের আশঙ্কা, ঘটনার প্রকৃত চিত্র আড়ালেই থেকে যাবে।
আমরা মনে করি, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে। না হলে এই কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবে না ছাত্রলীগ, মুক্তি পাবে না আওয়ামী লীগও।