৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করা বিএনপি আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনে কী করবে? যদি সেদিনের অবস্থানে তাদের বর্তমান অবস্থান বহাল রাখতে হয়, তাহলে দলীয় প্রতীক ও দলীয়ভাবে এ নির্বাচন বর্জন করতে হয়। প্রকাশ্য স্ববিরোধী অবস্থানে অবতীর্ন হলেই তবে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ সম্ভব।
বিগত দিনে উপজেলা ও সিটি নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেছে সত্য কিন্তু এগুলো দলীয় প্রতীকে নয়। এসব নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমেও তাদের রাজনৈতিক পরাজয়ই সাধিত হয়েছে। যে সরকারকে অবৈধ বলে এত জ্বালাও পোড়াও, মানুষ হত্যা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হলো, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়া স্ববিরোধিতা নয় কি?
নির্বাচন বর্জন করলেও কী লাভ হত তাদের। বিএনপির অবস্থানিক উভয় সংকট যেন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বৃত্তের ভেতর ঘুরপাক খেতে খেতে উভয় সংকটকে ক্রমশ তীব্রতর করে চলাই যেনো তাদের বাস্তবতা।
এবারের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্ববিরোধিতার বস্ত্র উন্মোচন ঘটতে চলছে। পথ হারিয়ে বিপথে চলে গেলে ফের বিপথ ছেড়ে পথে ওঠা যে কতো কঠিন, তা ভূক্তভোগীরাই টের পেতে পারে আর অন্যরা পারে বাঁকা হাসি হাসতে।
বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল দাবিদার আবার যুদ্ধাপরাধীদের দলে ভিড়িয়ে নেতৃত্ব ও মন্ত্রীত্বও প্রদান করে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক দাবিদার হয়ে রাজাকারদের মন্ত্রীসভাতেও ঠাঁই দেন। তিনি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনীদের দিয়ে রাজনৈতিক দলও গঠন করান।
তাদের এই স্ববিরোধী রাজনীতির ধারাবাহিকতাই দলকে উভয় সংকটে ফেলে চলছে বারবার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জিয়া পুত্র তারেক রহমান সংলাপ প্রসঙ্গে বলেছিলো, “কিসের সংলাপ অবৈধ সরকারের সাথে সংলাপ নয়, সরকার পতনের আন্দোলন করতে হবে।”
সরকারের পতন না ঘটিয়ে জিয়া পত্নী খালেদা জিয়া বাসায় ফিরবেন না, রাজনৈতিক কার্যালয়ে থাকবেন। বাসায় ফেরার জন্য শত অনুরোধেও তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টালেন না। অবরোধ চলবে, অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানালো।
তারা মানববন্ধন, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করল। জিয়া পত্নী ও বিএনপি নেত্রী কারও কথা শুনলেন না। অবরোধ চলতে লাগলো অনির্দিষ্ট কালের ঘোষণায়। তা এখনও বলবত রয়েছে। দেশবাসী অবরোধের ঘোষণা শুনেছে, কিন্তু অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষনা শুনলো না।
আর বাস্তবতা হচ্ছে অবরোধ কোথাও নেই। বিএনপির এই হাস্যকর হযবরল রাজনৈতিক কর্মসূচিই তাদের উভয় সংকটে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।
আদর্শিক ও গঠন তান্ত্রিক ভিত দূর্বল হলেই এমনটি ঘটে। আসন্ন স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন না করে থাকতে পারবে না।
দলীয় ভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেও দলীয় নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেই। অথবা দলীয় নেতারা বর্জন সিদ্ধান্ত মানলেও বিএনপির কোন লাভ হবে না ও সরকারের কোন ক্ষতি হবে না। যেমন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে গেলেন না এখন উপ-নির্বাচনে যেতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে তিনি নির্বাচনে গেলেও কারও কিছু যায় আসে না, না গেলেও কারও কিছু যায় আসে না। বিএনপির ক্ষেত্রেও তাই। গণভিত্তিহীন দলীয় কর্মসূচিগুলো ব্যর্থতার চরমতম অবস্থানে পৌঁছে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনার রাজনৈতিক যোগ্যতাই হারিয়ে ফেলেছে।
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া এতবড় একটি রাজনৈতিক দলের এরকম লজ্জাজনক পরিণতি দল পরিচালনার চরম ব্যর্থতারই নামান্তর। স্ববিরোধিতার আস্তরে দলটি আপাদ মস্তক ঢেকে গেছে। আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আস্তরটি আরও ঘনত্ব পাবে। হারাবে তার রাজনৈতিক সত্ত্বা। দেশবাসীর সামনে দৃশ্যমান হবে তার উভয় সংকটের করুণ চিত্র।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)