২৩ অক্টোবর দেশের পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। ৩০ অক্টোবর থেকে চলচ্চিত্রটি চলছে রাজধানী শহরের চার প্রেক্ষাগৃহ সহ চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের দুটি প্রেক্ষাগৃহে।
মুক্তির দিন থেকেই চলচ্চিত্রটি সব মহলে প্রশংসা পাচ্ছে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রটির নির্মাণে যে যত্নের ছাপ নির্মাতা রেখেছেন, তার প্রশংসা করছেন চলচ্চিত্রের অনেকে। চলচ্চিত্রে গল্প বলার ধরন, চরিত্রদের সাবলীল অভিনয়, ডাবিং, সম্পাদনা, দৃশ্য ধারণ সহ পুরো নির্মাণশৈল্পী নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বেশির ভাগ দর্শক।
সব মিলিয়ে ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’কে সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমার পরিপূর্ণ নির্মাণও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু সে হিসেবে চলচ্চিত্রটি যতোটা প্রশংসার দাবী রাখে, ততোটা কি পাচ্ছে? এমন প্রশ্নের ইঙ্গিত পাওয়া যাবে গুণী অভিনেতা, নির্মাতা আফজাল হোসেনের একটি পোস্টে। ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ নিয়ে শনিবার সকালে নিজের ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বলকে অভিভাদন জানিয়ে একটি লেখা দেন তিনি। যেখানে আফজাল বলছেন, ‘আমরা প্রাণখুলে ভালো বলা শিখিনি। ভাবি, নিজের প্রশংসায় অন্যজন বড় হয়ে যাবে!’
‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ নিয়ে আফজাল হোসেনের সেই লেখাটি হুবুহু চ্যানেল আইয়ের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
মাসুদ হাসান উজ্জ্বল, অভিনন্দন তোমাকে। তোমার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমাঘরে মুক্তি পেয়েছে এবং এই উপদ্রুতকালে দর্শক আগ্রহ নিয়ে সে ছবি দেখতে যাচ্ছে। বেশী সংখ্যক দর্শক ছবিটা দেখে উচ্ছাস প্রকাশ করছে, এ সাফল্যের জন্য আর এক দফা অভিনন্দন।
যে দেশে মন্দ চর্চার ফলে সিনেমা আকর্ষণ হারিয়েছে, সিনেমা হল ভেঙ্গে ফেলে বিপণী বিতান বানিয়ে ফেলা হচ্ছে- এরকম চরম দুঃসময়ে অনেকেই সাহস করে স্বপ্ন সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার সাহস দেখায়। ভয়ানক উজানে নাও ঠেলে এই যে স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- এদেশে তা বরাবরই সন্তানের উপর মৃত বাপের দিয়ে যাওয়া দায়িত্ব কর্তব্যের মতো। কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে না আসুক, সংবেদনশীলতা দিয়ে দেখার মানুষও মেলে না।
আমরা প্রাণখুলে ভালো বলা শিখিনি। ভাবি, নিজের প্রশংসায় অন্যজন বড় হয়ে যাবে। মন্দকে জোর গলায় মন্দ বলাতে দারুণ উৎসাহ। তবে সেই মন্দে যদি নিজ বা গোষ্ঠীস্বার্থ গুঁতো খায়, মন্দকে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ভালো বলে মুখে ফেনা তুলতে বাঁধে না। অনুপ্রাণীত করতে পারে, কৌতুহলী, আগ্রহী করে তুলতে পারে এমন ভালো, ব্যতিক্রমী এবং সাহসী ভূমিকার প্রতি যাদের অকুণ্ঠ সমর্থনে ঘন ঘোর অমানিশা কেটে যেতে পারতো, তাদেরও হিসেব কষে, অংক মিলিয়ে চলতে বলতে দেখা যায়।
সত্য, ন্যায়, স্বাভাবিকতাকে কবর দিয়ে মানুষ, সমাজ, সংষ্কৃতি ও দেশ নিয়ে আহা উহুতে নিত্য মানুষের মন্দই ঘটে। ভালোর চর্চা অনুশীলনের বদলে অহরহ নানা মন্দের মধ্য মানুষদের ডুবিয়ে রাখার চেষ্টায় কতটা অধপতন ঘটেছে তা দেখতে চাইলে দেখা যায়।
স্বপ্ন নিয়ে, নিষ্ঠা যত্ন প্রেম এবং শতভাগ নিবেদিত থেকে একটা পূর্ণদৈর্ঘ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ফেলা, অসাধ্য সাধন। সাধনের পর নিজেকে বাহবা দিতে হয় নিজেকেই। এ নিয়ম বেদনাদায়ক কিন্তু হেসে থাকতে হবে উজ্জ্বল। যখন আলাদা ভাব ও ভাষায় টেলিভিশনের জন্য নাটক বানানোর স্বপ্নে এই উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছিলে হাততালি মেলেনি। আলাদা ভাবনার মানুষকে সর্বাদা প্রতিকূলতা ঠেলে এগোতে হয়। ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে- এটাই তোমার বড় সাফল্য। আবার প্রাণখোলা অভিনন্দন।