চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

উইকেট নিয়ে গোলকধাঁধায় অস্ট্রেলিয়া

চট্টগ্রাম থেকে: মিরপুর টেস্ট শুরুর আগে ধাঁধায় পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া দল। ২৪ ঘণ্টা আগেও তারা জানতে পারেনি কোন উইকেটে খেলা হবে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় ঢাকা ছিল উইকেট। ঢেকে রাখা-খুলে রাখা নির্ভর করে আবহাওয়ার উপর। প্রকৃতির আনুকূল্য চট্টগ্রামে এসেও পেল না অজিরা।

শনিবার টিম বাস থেকে নেমে ঘাড়ের ব্যাগটা বাউন্ডারি সীমানার পাশে রেখেই ড্যারেন লেম্যান দ্রুত ছুটে গেলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট দেখতে। অস্ট্রেলিয়া দলের কোচ যখন ২২ গজের কাছাকাছি, সাগরিকার আকাশের মেঘ কাল হয়ে আসায় মাঠকর্মীরা ততক্ষণে চট দিয়ে ঢেকে ফেলেছেন সেন্টারের অনেকটা। ত্রিপল আবৃত করার আগেই অবশ্য লেম্যান সেখানে পৌঁছাতে পারলেন। চট উঁচিয়ে সময় নিয়ে দেখলেন উইকেট, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।

হ্যাজেলউডের ইনজুরিতে বদলি হিসেবে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়া থেকে উড়ে আসা ও’কিফ সমান কৌতূহল নিয়েই কোচের পাশে দাঁড়িয়ে উইকেট দেখলেন। লেম্যানের দেখা শেষ না হতেই ড্রেসিংরুমের দিকে ফেরার পথ ধরলেন ও’কিফ। উইকেট নিয়ে জিজ্ঞেস করতেই জানালে পর্যবেক্ষণ, একেবারেই স্পিন সহায়ক হবে। মনে হল দুইটা উইকেট ঠিক রাখা হয়েছে। একটা কিছুটা মনে হয় ফ্ল্যাট হতে পারে।

আসলেই দুটি উইকেট পুরোপুরি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের জন্য। শেষ পর্যন্ত কোন উইকেটে খেলা হবে, সেটা জানা যাবে আজই।

ঈদের দিন সকালে শুরু হওয়া বৃষ্টি যখন থামে, তখনই অনুশীলনের নির্ধারিত শিডিউল ছিল বাংলাদেশের। উইকেটের চাই রোদ, বাতাস। যেজন্য খুলে রাখা হয়েছিল। কয়েকদফায় খোলা সাদা উইকেট দেখে পড়তে চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের কোচ-ক্রিকেটাররাও। পরে বিকেল ৩টায় অস্ট্রেলিয়া দলের অনুশীলন শুরুতেই পড়ে বৃষ্টি-বাধায়।

রোববার শেষদিনের অনুশীলন। চট্টগ্রামের বৃষ্টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা না পেলেও হোম অ্যাডভান্টেজ নিতেই যে উইকেট নিয়ে ধাঁধায় রাখা হয়েছে, সেটি বুঝতে হয়ত সমস্যা হয়নি অজিদের।

মিরপুর টেস্টে দুই দলের ৪০ উইকেটের মধ্যে স্পিনে পড়েছে ৩৪টা। পেসারদের মধ্যে উইকেট পাওয়া প্যাট কামিন্স নিয়েছে দুই ইনিংসে ৪টি। দুই ব্যাটসম্যান হয়েছেন রান আউট। অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে স্পিন আক্রমণে বৈচিত্র্য থাকায় বাংলাদেশ ঘূর্ণিতেই ব্যবধান গড়েছে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টও স্পিনারদের হতে যাচ্ছে। স্টেডিয়ামপাড়ায় গুঞ্জন, দুটির মধ্যে একটি উইকেট একটু মন্থর আরেকটা সামান্য দ্রুতগতির। শেষ পর্যন্ত নিজেদের শক্তির কথা বিবেচনায় করেই উইকেট পেতে চাইবে বাংলাদেশ।

শের-ই-বাংলার উইকেট যে এতটা স্পিনবান্ধব হবে তা হয়ত বুঝতে পারেননি মুশফিক-স্মিথদের কেউই। বুঝলে হয়ত দুজন করে পেসার রাখতেন না তারা। চট্টগ্রামের উইকেট হতে পারে তার চেয়েও স্পিনিং।

গত বছর ইংল্যান্ডের সঙ্গে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। চতুর্থ দিন পর্যন্ত চালকের আসনে ছিল স্বাগতিক দল। শেষদিনের প্রথম সেশনেই খেলা শেষ হয়ে যায়, বাংলাদেশ ২২ রানের ম্যাচ হাতছাড়া করে। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে ১-১ সমতায় শেষ হয় সিরিজটি।

ভেন্যু যখন সেই জহুর আহমদে চৌধুরী স্টেডিয়াম, উইকেট তো আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেই। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচের সময় উইকেট নিয়ে আলোচনা ছড়িয়েছিল দুই দলের ড্রেসিংরুম, ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে প্রেসবক্সজুড়ে। সাকিব-মিরাজদের বল বাঁক খেয়েছিল অবিশ্বাস্যভাবে। এবার সেটির পুর্নমঞ্চায়ন হলে ২-০ তো হতেই পারে!

ছবি: সাকিব উল ইসলাম