দেশের রাজনীতিতে এই মূর্হুতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হয়ে এলেও জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার হবে কি না, তা নিয়ে পরিষ্কার মতপার্থক্য রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের সময় বিভিন্ন ইস্যুর মধ্যে এটিও ছিল একটি। তখন ইসি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উপযোগিতা সর্ম্পকে বিভিন্ন দলের ঐক্যমতের বিষয়ে মত দিলেও হঠাৎ করে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিলে আলোচনার সূত্রপাত হয়।
গত ২৮ আগস্ট ইসি জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার পরিকল্পনা থাকায় ইসি দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। নির্বাচনের আগে আইন পাস, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতসহ সবকিছু ঠিক থাকলে একাদশ সংসদ নির্বাচনে এক-তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার মতো কমিশনের সক্ষমতা থাকবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করছে ইসি।
ইসির এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার আওয়ামী লীগের নতুন কোন দাবি নয়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমরা কিন্তু নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের দাবি জানিয়ে ছিলাম। এটা আমাদের দাবিতে এখনও অটল। ইসির সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ মেনে নেবে বলেও জানান তিনি।
ইভিএম বিষয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই নেতিবাচক অবস্থানে বিএনপি। ইভিএম/ ডিভিএম পদ্ধতিতে এক চাপে ৫টি ভোট দেয়া যায় এবং এক মিনিটেই তা হ্যাক করা যায় দাবি করে বিএনপি বলছে, জনগণের উপর আস্থা হারিয়ে আওয়ামী লীগ ভোট জালিয়াতির জন্য ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহারের কৌশল নিয়েছে। বিএনপি একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞও হাজির করেছেন তাদের মতের পক্ষে।
জাতীয় নির্বাচন সন্নিকটে, এই অল্প সময়ে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্তে কিছুটা মতপার্থক্য দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনের ভেতরে। বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহারে ভিন্নমত পোষণ (নোট অব ডিসেন্ট) করে নির্বাচন কমিশন-ইসি’র সভা বর্জন করেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তা নিয়ে আলোচনা চলছে দেশজুড়ে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায় ও প্রেক্ষাপট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব অনেক, এছাড়া গেল সংসদ নির্বাচনের মতো আরেকটি নির্বাচন হতে পারে এমন শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে। এই অবস্থায় লাখ খানেক ইভিএম দিয়ে ১০০ আসনে নির্বাচন করা সময়োপযোগী হবে কিনা, তা নিয়ে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্তে আসা দরকার বলে আমরা মনে করি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও ইতিবাচক মনোভাবের মধ্যে দিয়ে দেশে ভোটকেন্দ্রিক গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করুক, এই আমাদের প্রত্যাশা।