ইভিএম/ ডিভিএম পদ্ধতিতে এক চাপে ৫টি ভোট দেয়া যায় এবং এক মিনিটেই তা হ্যাক করা যায় দাবি করে বিএনপি বলছে, জনগণের উপর আস্থা হারিয়ে আওয়ামী লীগ ভোট জালিয়াতির জন্য ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহারের কৌশল নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার গুলশানের বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইভিএম এক্সপার্ট ম্যাট বিশপ এর উদ্বৃতি সংবলিত ইভিএমের টেকনিক্যাল সমস্যা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে ম্যাট বিশপও এবিষয়ে কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে ইভিএম- জালিয়াতির সুযোগ থাকায় এক চাপে ৫টি ভোট দেয়া সম্ভব। তাছাড়া দেশের কিংবা বিদেশের মাটিতে বসেও ইভিএম হ্যাক করা যায় এবং একটি ইভিএম হ্যাক করতে এক মিনিটের বেশী লাগে না।
তিনি বলেন, সকল ইভিএম বিদেশে তৈরি হয়। ফলে, ইভিএম মেশিন নিয়ন্ত্রণের গোপন কোড তাদের কাছে থাকে। তারা চাইলে সহজেই কারো পক্ষে-বিপক্ষে ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতো সব টেকনিক্যাল সমস্যার কারণেই পৃথিবীর ৯০ ভাগ গণতান্ত্রিক দেশে ই-ভোটিং/ইভিএম/ডিভিএম পদ্ধতি চালু নেই। হাতেগোনা যে কয়েকটি দেশ চালু করেছিল প্রচণ্ড সন্দেহ ও বিতর্কের পর তারা এটি থেকে সরে এসেছে। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ইত্যাদি উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ বিতর্কিত এ পদ্ধতি ইতিমধ্যে পরিত্যাগ করেছে।
এমতাবস্থায় ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহারের গোপন অপতৎপরতা অবৈধ সরকারের ভোট জালিয়াতি করার নতুন কৌশল মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করে জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে৷ আমরা নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় ঐক্যমত ও আস্থা সৃষ্টি না হলে কখনো ইভিএম/ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না-মর্মে লিখিত দিয়েছিলাম, তখন নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তা ব্যবহার করা যাবে না। হঠাৎ করে কেন, কার কথায় এবং কাকে গোপনে নির্বাচিত করার জন্য ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হলো, তা আমরা জানি। এই অপতৎপরতা জনগণ প্রতিহত করবে।
তিনি বলেন, জনগণের কষ্টার্জিত প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ইভিএম মেশিন কেনার এই উদ্যোগ থেকে বেরিয়ে আসুন। অন্যথায় এর প্রতিটি পয়সার দায়ভার নির্বাচন কমিশনকেই গ্রহণ করতে হবে। ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের সঙ্গী আর হবেন না। জনগণের কথা ভাবুন।
কোনো বিচারেই আগামী নির্বাচনের ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহার যোগ্য হবে না জানিয়ে এবং চার হাজার কোটি টাকার ইভিএমের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনকে বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ভোটের জন্য কিছু প্রস্তাবনা দেন মির্জা ফখরুল।
প্রস্তাবনায় রয়েছে-
১। আগামী নির্বাচনের জন্য ৪৪ হাজার ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করুন।
২। ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করুন, এতে শ্রেণী কক্ষ সংকট কিছুটা হলেও দূরীভূত হবে।
৩। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মোবিলিটি বৃদ্ধির জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবারহ করুন
৪। ব্যালট পেপারের জালিয়াতি রোধে সরকারের মুখোপেক্ষী না হয়ে নিজেদের জন্য অত্যাধুনিক প্রিন্টিং প্রেস স্থাপন করুন।
৫। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন
৬। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল, পোলিং এজেন্ট ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন।
৭। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাগণ নির্বাচনের সময় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন৷ এজন্য তাদেরকে সম্মানী ও ঝুঁকিভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করুন
৮। নির্বাচনে আনসার- ভিডিপি ও গ্রাম পুলিশ অত্যন্ত কষ্টকর দায়িত্ব পালন করেন৷ তাদেরকে পর্যাপ্ত সম্মানী ও খোরাকি ভাতা প্রদান করুন।
৯। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করুন। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে।
১০। ভোটগ্রহণকালে ছবি ধারণ ও ভিডিও করার জন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভিডিও ক্যামেরা সরবরাহ করুন।