মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কয়েকঘণ্টা পরই মুখোমুখি হবে দুই হট-ফেভারিট ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এক সপ্তাহ আগে যে ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপের শিরোপার অন্যতম দাবিদার বলা হচ্ছিল, সেই তারাই এখন ছিটকে পড়ার হুমকিতে! সেমিফাইনালের পথ মসৃণ রাখতে অজিদের বিপক্ষে জয়টা খুব দরকার ইংলিশদের।
সেখানে আগেভাগেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে ইংলিশদের হারাতে মরিয়া হয়ে নামবে অস্ট্রেলিয়া। তাতে রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছে লন্ডনের ঐতিহাসিক লর্ডস স্টেডিয়াম।
ছয় ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে অজিদের।
অন্যদিকে সমান ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে অবস্থান ইংল্যান্ডের। স্বাগতিকদের শেষ দুটি ম্যাচ নিউজিল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে। নির্বিঘ্নে সেমিতে যেতে হলে তিন ম্যাচের কমপক্ষে দুটিতে জিততে হবে মরগানদের। বিপদ কমাতে তাতে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে মরিয়া হয়ে নামবে ইংল্যান্ডও।
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে বেশ এগিয়ে অজিরা। ১৪৭ বারের সাক্ষাতে অস্ট্রেলিয়ার ৮১ জয়ের বিপরীতে ইংল্যান্ড জিতেছে ৬১ ম্যাচে। অন্য পাঁচটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। তবে ইংল্যান্ডের মাটিতে ৬৮ বারের সাক্ষাতে স্বাগতিকদের ৩৪ জয়ের বিপরীতে অজিরা জিতেছে ৩০টিতে।
বিশ্বকাপের পরিসংখ্যানও এগিয়ে রাখছে অস্ট্রেলিয়াকে। বিশ্বমঞ্চে সাতবারের সাক্ষাতে অস্ট্রেলিয়ার ৫ জয়ের বিপরীতে ইংল্যান্ড জিতেছে দুটিতে। বিশ্বকাপে সর্বশেষ তিনবারের সাক্ষাতেই জিতেছে অজিরা।
অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে প্রতিশোধ নেয়া হবে ইংল্যান্ডের। গত বিশ্বকাপে ইংলিশদের হারিয়ে শিরোপার পথে এগিয়েছিল অজিরা। পরে উঁচিয়ে ধরে ট্রফিও। এবার ঘরের মাঠে সেই হারের বদলা নেয়ার পালা ইংল্যান্ডের।
বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে ইংল্যান্ড, যে দলের জন্য ৩০০ পেরোনো রান করা ডালভাতের মতোই! কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ম্যাচে ২৩২ রান তাড়া করতে নেমে ২০ রানে হারের পর বড় ধাক্কাই খেয়েছে ইংলিশরা। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণ টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা, রয়-বেয়ারস্টোদের বড় পরীক্ষাই দিতে হবে।
নজর থাকবে যাদের উপর
জফরা আর্চার (ইংল্যান্ড): অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে জফরা আর্চারকে আর কোন প্রতিপক্ষ বেশি ভালো করে চেনে? অস্ট্রেলিয়ান বিগ ব্যাশে হোবার্ট হ্যারিকেনের হয়ে আলো কেড়েই ইংল্যান্ড জাতীয় দলে জায়গা করে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বংশোদ্ভূত গতিদানব। বিগ ব্যাশের দল পার্থ স্কোয়ার্চেও সাবেক কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার এখন অস্ট্রেলিয়ার কোচ, তিনি আর্চারের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই শিষ্যদের মাঠে নামাবেন। চলতি বিশ্বকাপে গতি, সুইং, ইয়র্কার ও বাউন্সারে ব্যাটসম্যানদের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন আর্চার। অজিদের জন্য তাই হুমকি হয়ে উঠতে পারেন এ গতিদানব।
মার্কাস স্টয়নিস (অস্ট্রেলিয়া): অজিদের লোয়ার মিডল-অর্ডারে আস্থার নাম মার্কাস স্টয়নিস। শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারেন এ অজি অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও সমান দক্ষ তিনি। বোলিং বৈচিত্র্য দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে সক্ষম। হাইভোল্টেজ ম্যাচে ইংল্যান্ডের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
টিম নিউজ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেসন রয়ের পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। ৪৭.৪৩ গড়ে ১১১.৩০ স্ট্রাইক রেটে ৭৫৯ রান করেছেন তিনি। যার মধ্যে মেলবোর্নে গত বছর ১৮০ রানের অনবদ্য ইনিংসটিও আছে রয়ের। যদিও ইনজুরির কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাকে পাচ্ছে না ইংল্যান্ড। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘গ্রুপপর্বের’ শেষ দুটি ম্যাচে খেলার জন্য ফিট হয়ে উঠছেন ইংলিশ ওপেনার। রয়ের জায়গায় একাদশে থাকবেন জেমস ভিন্স। লিয়াম প্লাঙ্কেট অথবা মার্ক উড দুজনের একজন বোলিং অ্যাটাকে ক্রিস ওকস ও জফরা আর্চারের সঙ্গী হবেন।
বিশ্বকাপের আগে সাউদাম্পটনের প্রস্তুতি ম্যাচ বিবেচনায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে একাদশে পরিবর্তন আনতে পারে অস্ট্রেলিয়া। ফলে অ্যাডাম জাম্পা ও নাথান কোল্টার-নাইলের জায়গায় একাদশে ফিরতে পারেন নাথান লায়ন ও জেসন বেহরেনডোর্ফ।
ফ্যাক্ট: লর্ডসে যখন অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে, ম্যাচটিতে চোখ রাখবে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানও। এই ম্যাচের ফলাফল যে দল দুটির সেমিফাইনালে ওঠার সিঁড়ি হিসাবে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দুদলই ইংল্যান্ডের হার কামনা করবে। ইংলিশরা হেরে গেলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সেমিফাইনালের মলিন স্বপ্ন জ্বলজ্বল করে উঠবে আরও। লর্ডসে কার জয় হবে- ইংল্যান্ড নাকি অস্ট্রেলিয়ার? নাকি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রার্থনার? সেটি জানতে আরও কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
সম্ভাব্য একাদশ
ইংল্যান্ড: জনি বেয়ারস্টো, জেমস ভিন্স, জো রুট, ইয়ন মরগান, বেন স্টোকস, জস বাটলার, মঈন আলি, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, জফরা আর্চার, লিয়াম প্লাঙ্কেট/মার্ক উড।
অস্ট্রেলিয়া: অ্যারন ফিঞ্চ, ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা/শন মার্শ, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, অ্যালেক্স ক্যারি, প্যাট কামিন্স, নাথান কোল্টার-নাইল, মিচেল স্টার্ক ও অ্যাডাম জাম্পা।