চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আমেরিকাকে বিশ্ব শান্তি পুরস্কার দেয়া হোক

৯/১১’র পর হয়তো দিনটি এখন ১১/১৩ হিসেবেই পরিচিতি পাবে। বলছি ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার কথা। আমেরিকায় টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর পুরো পৃথিবীর দৃশ্যপটে যেমন একটা পরিবর্তন এসেছিলো, ধারনা করা হচ্ছে ফ্রান্সে ভয়ানক ওই হামলার পরও হয়তো পুরো পৃথিবীর দেশগুলোর মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে আসবে আমূল পরিবর্তন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর সুফল আসলে কারা ভোগ করছে? নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা যে কোন সন্ত্রাসী হামলার পর যেমন এর কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন, ঠিক তেমনি রাজনীতিবিদরাও ভাবতে শুরু করেন এর সুফল আসলে কারা ভোগ করছে। কোন এক অজানা কারণে এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পর সত্যি সত্যি কারা সুফল ভোগ করছে সেটা নিয়ে তেমন কোন মাতামাতি হতে দেখা যায় না।
আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার উসিলায় আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে। ৯/১১ ছিলো সেই হামলার প্রেক্ষাপট। আমেরিকা আফগানিস্তানে সেই হামলা চালিয়ে কতোটা লাভবান হয়েছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। কিন্তু তাদের স্থলবাহিনী দেশটিতে আজও অবস্থান করছে।
আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে যেই আল কায়েদা ও তালেবানদের উৎখাতের কথা বলে তারা আফগানিস্তানে ঢুকেছিলো; তারা দেশটিতে এখনো বিদ্যমান এবং বিভিন্ন সময়েই তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে! অবশ্য আমেরিকা যাদের নিজ হাতে আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধের সময় সৃষ্টি করেছে, তাদের আসলেই উৎখাত করতে চায় কিনা সেটা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ!
শুক্রবার রাতে প্যারিসে যেই হামলাটি হয়েছে, তার কিছু দিন আগেও কিন্তু বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলা পৃথিবীতে ঘটে গেছে। তুরস্কের রাজধানীতে একটি প্রতিবাদ সমাবেশে ভয়াবহ বোমা হামলায় কিন্তু অনেক মানুষের প্রাণ গেছে মাত্র মাস খানেক আগেই। এছাড়া এক মাস আগেই নেদারল্যান্ডস থেকে ফ্রান্সগামী একটি ট্রেনেও একে ৪৭ রাইফেল নিয়ে সন্ত্রাসীরা উঠে পড়েছিলো, কিন্তু সেই যাত্রায় কয়েকজন যাত্রী তাদের ধরে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলো।
এছাড়া লেবানন থেকে শুরু করে এমনকি বাংলাদেশেও আইএস রয়েছে এই রকম একটা গুঞ্জন আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশ গুলো কিছু দিন ধরেই বেশ জোর স্বরে’ই বলতে চাইছে। কোন একটা অদৃশ্য শক্তি যেন চাইছে পৃথিবীতে আইএস ছড়িয়ে পড়ুক!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ গুলোতে আইএসের উপস্থিতি এবং সন্ত্রাসী হামলা হলে লাভ’টা আসলে শেষপর্যন্ত কাদের ঘরে পৌছায়?
আমেরিকা যদি এখন প্রমান করতে সক্ষম হয় আইএস পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, তাহলে তারা সিরিয়ায় হামলা আরো জোরদার করার প্রেক্ষাপট পাবে এবং সেখানেও তাদের স্থলবাহিনী পাঠিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করবে, যেখানে রয়েছে প্রচুর তেলের খনি! এ ছাড়া দেশটির অস্ত্র ব্যবসা তো রয়েছেই।
৯/১১ এর পর আমেরিকা যেমন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলো এখন দেখার বিষয় হচ্ছে ১১/১৩ এর পর সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণ কারা নেয়।
তবে প্রেক্ষাপটে এর মাঝেই নানান বিষয় এসে জুড়ে বসেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আমেরিকা ও রাশিয়াকে সিরিয়া বিষয়ে এক হতে বলেছেন। সেই ক্ষেত্রে দেখার বিষয় আমেরিকা রাজি হয় কিনা। রাশিয়া সিরিয়াতে আইএসের উপর বিমান হামলা শুরু করলে আমেরিকা সেটা ভালো চোখে দেখেনি। কারন তারা চেয়েছিলো- নিজেরাই একা লুটেপুটে খাবে। এখন যেহেতু প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার আবির্ভাবও হয়েছে এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার সমর্থনও চাইছে, তাই দেখার বিষয় হবে-আমেরিকা কোন পথে পা বাড়ায়।
তবে একটা কথা বলাই যায়-বড় বড় সন্ত্রাসী হামলার পর আমেরিকা কোনো না কোনো ভাবে নিজেদের ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করেছে। শুক্রবার রাতে যখন ফ্রান্সের রাজধানী পুড়ছিলো সন্ত্রাসীদের হামলায়, সেই ফাঁকে আমেরিকা তাদের কাজের কাজটি সেরে ফেলেছে। সৌদি আরবের কাছে ১.২৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই শুক্রবার’ই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
অস্ত্র বিক্রি করে কিভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব সে কেবল আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোই ভালো বলতে পারবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে তো মনে হচ্ছে অস্ত্র বিক্রি করেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে! সেই ক্ষেত্রে অস্ত্র বিক্রিতে এক নাম্বার দেশ যেহেতু আমেরিকা; তাই শান্তিতে দেশ হিসেবে কোন দেশকে যদি পুরষ্কার দেয়া সম্ভব হয় তাহলে বিশ্ব শান্তির জন্য এই পুরষ্কার হয়তো আমেরিকার’ই প্রাপ্য!
মানবতা ধ্বংস করে যদি শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই শান্তির দরকার আছে কিনা সেই প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে!