ঈদের জন্য কাজের সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারলেন না অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। তবে এটুকু স্পষ্ট করলেন, কম কাজ করেছেন তিনি। ফোনের ওপাশ থেকে মনে করিয়ে দিলেন, চ্যানেল আইয়ের পর্দায় ঈদের দিন তার অভিনীত ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’র ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের কথা। ভাবনার কাছে এই আনন্দটা বিশাল! জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তিনি কোথাও যাচ্ছিলেন। মুঠোফোনেই চ্যানেল আইয়ের সাথে আলাপ সারলেন ‘ভয়ংকর সুন্দর’ এর এই অভিনেত্রী:
ঈদের কাজ…
সম্প্রতি তাসদিক শাহরিয়ার খানের পরিচালনায় মীর সাব্বির ভাইয়ের সঙ্গে একটি কাজ করলাম। নাম ‘আন্তনগর প্রেম’, মীর সাব্বির ভাইয়ের পরিচালনায় কাজ করেছি ‘চড়ুইভাতি বিয়ে’, সেতু আরিফের ‘বিশুদ্ধ ভালোবাসা’, শুদ্ধমান চৈতন্য’র ‘গ্রিন পিজ্জা’, এসকে শুভ’র ‘প্রশ্নবোধক’ এ কাজ করেছি। ঈদে আমার ‘অ্যামাউন্ট অব গুড ওয়ার্ক’ আসবে। বৃন্দাবন দাসের রচনা ও দীপু হাজরার পরিচালনায় একটি নাটকে কাজ করবো, নাম ঠিক হয়নি। পাশাপাশি ঈদের কয়েকটি টিভি শো করেছি। সময় টিভির সঙ্গে আউটডোরে একটি শো করেছি। ওটা খুব ভালো হয়েছে। ঈদের জন্য কয়টি কাজ করলাম সংখ্যায় গুনে বলতে পারব না। আর ঈদের দিন চ্যানেল আইয়ে প্রচার হবে আমার সিনেমা ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। এটা খুবই স্পেশাল হবে বলে আমি মনে করি।
সংখ্যায় তুলনামূলক কম কাজ করেন, এর বিশেষ কোনো কারণ আছে?
মাসে ১৫ দিন শুটিং করছি। এটা আমার জন্য যথেষ্ট! সত্যি কথা বলতে, ভালো কাজ করতে গেলে ৩০দিন শুটিং করা সম্ভব না। বেছে বেছে কাজ করি বলে একসঙ্গে সব কাজ করা হয় না। তবে আমার ৩০ দিন শুটিং করতে কোনো অসুবিধে নেই যদি ৩০ দিনই ভালো কাজ থাকে। মানে আমি কম কাজ করতে চাই না, বেশি কাজ করতে চাই। কিন্তু কথা একটাই, ভালো কাজ চাই।
এখনকার নাটকগুলো কাজ করতে গিয়ে কোনো পরিবর্তন অনুভব করছেন?
যেভাবে কাজ চলতে থাকে সেভাবে আমাকে দেখা যায় না। আমি যেসব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করি তাদের আগ্রহ আলাদা। তাছাড়া ভিন্ন ভিন্ন গল্পে মানুষ আমাকে সবসময় পছন্দ করেন। এজন্য র্যান্ডম গল্পের জন্য আমাকে পরিচালকরা নক করেন না। আমি জানি না এখন কেমন কাজ হচ্ছে! কিন্তু আমি মনে করি, আমি যে কাজটি করি সেখানকার গল্প ও চরিত্র কতোটা প্রভাব ফেলছে সেটা ভীষণ জরুরী। তাছাড়া পরিচালক কতটা যত্নশীল হয়ে কাজটা শেষ করবেন সেটাও আমার কাছে ম্যাটার করে।
ভিউ টেন্ডেসিতে অধিকাংশরা ঝুঁকছেন! ঈদের নাটকগুলো প্রচারের পর আরও বেশি ভিউ নিয়ে মাতামাতি হতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই…
সবাই সোশ্যাল মিডিয়াতে সংযুক্ত। সে কারণে এটা হবে স্বাভাবিক। কিন্তু আমার মনে হয়, ভিউ বেশি হলেই যে কাজটা ভালো এমনটা মোটেও না, আবার ভিউ হয়নি বলে কাজটা খারাপ হবে তাও না। তবে সস্তা জিনিসের ভিউ একটু বেশি হয়ে থাকে। ভিউ জিনিসটা আসলে আপেক্ষিক। কীভাবে ভিউ হয় সেই সব তরীকা কমবেশি সবাই জানি। আমারও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম আছে। আমি জানি, কোন ছবি পোস্ট করলে বেশি লাইক পড়বে! সেই ছবি আমি পোস্ট করব কিনা সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ধরেন, বিপাশা হায়াত কিংবা তাদের সময়ের অনেক গুণী অভিনেতা-অভিনেত্রীর তো ফেসবুক আইডি নেই। এর মানে তারা তারকা না এমনটা তো বলা যাবে না!
অনিমেষ আইচের ‘ভয়ংকর সুন্দর’ এর ঠিক রিভার্স ছবি নূরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’। দেখে মনে হয়েছে এটি ছোট্ট এক ‘মুক্তিযুদ্ধের দলীল’! ছবিটি আপনার ফিল্ম ক্যারিয়ারে বাড়তি কিছু যোগ করলো?
প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর আছে। দুটো ছবি একেবারে আলাদা। ভয়ংকর সুন্দরের পর এমন চরিত্র খুঁজছিলাম যেটা আগেরটার থেকে ভিন্ন। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’তে তাই পেয়েছি। এ কাজটির জন্য অডিশন দিতে হয়েছে। পরিচালক আতিক ভাই বলেছিলেন, কোন চরিত্র চাও? তুমি সবগুলোর জন্য পারফেক্ট! কিন্তু আমি বলেছিলেন, পরিচালক হিসেবে আপনি যেটা মনে করেন সেটা চাই।’
তখন উনি আমাকে পদ্ম চরিত্রে নেন। ভয়ংকর সুন্দরের নয়ন তারা থেকে সো ফার ভিন্ন পদ্ম চরিত্র। শেষ দৃশ্য মানুষ যখন তালি দিয়েছে ওখানে স্বার্থকতা পেয়েছি। অভিনেত্রী হিসেবে এটা আমি প্রাপ্তি মনে করি। আমি সবসময় চ্যালেঞ্জিং কাজ খুঁজি। যে চরিত্রটি আমাকে ভাবাবে সেটাই আমি করবো। আমি চাই, পরিচালকরা আমাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিক। খুব সহজেই করে ফেললে তো মজা থাকে না।
পাশ্ববর্তী দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে হচ্ছে, তাহলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নারী কেন্দ্রিক মুখ্য চরিত্রের কাজ কম হয় কেন বলে মনে করেন!
কিছুদিন আগে ‘দামপাড়া’ নামে একটি ছবি করলাম। গান বাকি আছে। এতে বাংলাদেশের প্রথম ফিমেল অ্যাম্বাসেডরের চরিত্র করেছি। এটাও ভীষণ শক্তিশালী চরিত্র। আমি এমন শক্তিশালী চরিত্র খুঁজি যা মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু এ ধরনের কাজ আমাদের এখানে খুব কম হয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার মতো ইন্ডাস্ট্রিও পুরুষতান্ত্রিক। পুরুষ কেন্দ্রিক গল্প হয়। ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’তে যদি ছেলে চরিত্র ভালো করতো, তাহলে তাকে অন্যরকম ভাবে সেলিব্রেট করতো। আমাদের সমাজে কোনো পুরুষের সাফল্য সেলিব্রেট করে যতটা উচ্ছ্বাস হয়, নারী সাফল্য সেলিব্রেট করতে কোথায় জানি দ্বিধা বোধ করেন অনেকেই। আমি লন্ডন থেকে ডিগ্রী নিয়ে পড়ালেখি করেছি, আমার বাবা পরিচালক। অনেকেই ভাবে আমি সোনার চামচ মুখে দিয়ে চলি। কিন্তু বিষয়টি একদমই তা নয়। ভালো কাজের জন্য অপেক্ষা, স্ট্রাগল, পরিশ্রম শুধু আমাকেই করতে হয়। কিছুদিন আগে অভিনয় ও ডিরেকশনের উপর ৪ মাসের একটা কোর্স করেছি। আমি সবসময় তৈরি হতে থাকি, কখনও বসে থাকি না।
নারী কেন্দ্রিক কাজের যে সংকট বললেন, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় আছে?
এখন আমাদের মেয়েরা অনেক ওপেন মাইন্ডের। কিন্তু দিনশেষে এটা আসলে ‘মেনস ওয়ার্ল্ড’। ভীষণ সত্য যে, আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। এর থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। মেয়েদের অনেক প্রমাণ দিতে হয়। কিন্তু ছেলেদের কেউ কিছু বলে না। পুরুষ অভিনেতার ফিগার নিয়ে কেউ কথা বলে না। সবাই শুধু নারী অভিনেতাদের স্লিম দেখতে চাইবে কেন? নারী-পুরুষ সবাই তো মানুষ। মানুষ মনে করে, মেয়েরা সুন্দর থাকলেই হয়। কিন্তু এটা একেবারে ভুল।
শেষ প্রশ্ন, নাচ-গান অর্থাৎ মসলাদার বাণিজ্যিক ধারার সিনেমায় কাজ করতে কখনও হচ্ছে হয়? সিনেমা তো সবই বাণিজ্যিক, তবে অবশ্যই চাই এ ধরনের সিনেমায় কাজ করতে। মজার গল্প বলি, যখন আমি নতুন কোনো কাজ করতে যাই, আমার মা আফসোস করে বলে ‘আবার কোনো কষ্টের চরিত্র’! আমার মা আমাকে শাড়ী পরে দৌড়াতে দেখতে চায়, হাসি আনন্দের সিনেমায় দেখতে চায়। আমি নিজেও সবসময় চাই। কিন্তু আমার কাছে গল্প-চরিত্র পছন্দ হতে হবে। সবকিছু সুন্দর হলে আমি এ ধরনের কাজের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমি বুঝেশুনে করতে চাই।