চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি আমার বাবার গল্পে’

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল একটি ভূখণ্ড, যার নাম বাংলাদেশ। মহান স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর শুক্রবার। সারা দেশে জাতীয়ভাবে পালন হচ্ছে দিনটি। আর এই বিশেষ দিনটি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশের তারকারাও যথাযথ সম্মানের সাথে উদযাপন করছেন। তাদের একজন তারকা অভিনেত্রী জয়া আহসান।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ‘গেরিলা’ খ্যাত এই অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অনুভূতির কথা ভাগাভাগি করেছেন বন্ধুদের সাথে।

জয়া লিখেছেন, আমি বড় হয়েছি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে শুনতে। আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা যখন তাঁর গল্প করতেন, আমাদের চারপাশে ফুটে উঠত গেরিলা যুদ্ধের জীবন্ত আবহ। দিব্যি দেখতে পেতাম, পাকিস্তানি বাহিনীর বৃষ্টির মতো গোলাগুলির মধ্যেই অস্ত্র হাতে ছুটে যাচ্ছে এক কিশোর। ছোট বোনটির সঙ্গে কবে যে শেষ গল্প হয়েছিল তার। দেখতে পেতাম, মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য লাইন দিয়েছে পায়ের ফাঁকে কাদা লেগে থাকা এক কৃষক। কত দিন কাঁচা ধানের মিষ্টি গন্ধ সে নেয়নি। ওর বুকে জেদ, স্বাধীন দেশের মাটিতে গিয়ে ধান ফলাবে। এ রকম অনেক মুক্তিযোদ্ধার রক্ত মিশে গেছে মাটিতে। বহু নিস্পাপ মানুষের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল নদী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে কৃতজ্ঞচিত্তে জয়া স্মরণ করেন দেশ-বিদেশের সহায়তার কথা, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো। জয়া লিখেছেন, ভারত আশ্রয় দিয়েছিল এক কোটি শরণার্থীকে, আর তার বহু জওয়ান দিয়েছিল প্রাণ। জাতিসংঘে সমাজতন্ত্রী সোভিয়েত ইউনিয়ন বইয়ে দিয়েছিল বন্ধুত্বের ঝর্ণাধারা। আমেরিকায় সরকার ছিল বৈরি, কিন্তু তার কবি–শিল্পী–সাংবাদিকেরা কণ্ঠে তুলে নিয়েছিল আমাদের জন্য মুক্তির গান। আমাদের মুক্তির মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন রবিশঙ্কর, মাদার তেরেসা, জর্জ হ্যারিসন, জোন বায়েজ, গিন্সবার্গ। আরও কত শত বন্ধু।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে জয়া সব বাঙালিকে অভিবাদন জানানোর আগে বললেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি আমার বাবার গল্পে। প্রাণ নিবেদন করা বহু মুক্তিযোদ্ধার কাহিনীতে। পীড়িত নারীর আর্তিতে। বিদেশী বন্ধুদের হাতের আবাহনে। আকাশে উড়ন্ত লাল–সবুজে। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি এর ৫০ বছরের সোনালি জয়ন্তীতে ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশের হেঁটে যাওয়ায়। একাত্তরে প্রাণ দেওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধের গর্ভ থেকে বাংলাদেশের জন্ম দেখার জন্য বেঁচে থাকা সব বাঙালিকে বিনত অভিবাদন।

মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর উল্লেখযোগ্য টিভি ফিকশন ও চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন জয়া আহসান। তার অভিনীত মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর সবচেয়ে আলোচিত সিনেমার নাম ‘গেরিলা’। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিচালনায় এই ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি।

এমনকি জয়া আহসান অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অলাতচক্র’ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম থ্রিডি চলচ্চিত্র। তরুণ নির্মাতা হাবীবুর রহমান পরিচালিত এই ছবিটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক আহমদ ছফার ‘অলাতচক্র’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। এত জয়ার বিপরীতে দেখা যায় আহমেদ রুবেলকে। ১৯ মার্চ মুক্তি পাওয় এই চলচ্চিত্র দেশের বেশকিছু প্রেক্ষাগৃহে এখনও চলছে।