জোবেরা রহমান লিনু। এক নামে যাকে সবাই চেনে টেনিসের সম্রাজ্ঞী বলে। চেনে বাংলাদেশের প্রথম গিনিজ রেকর্ড অধিকারী হিসেবে। কে না জানে জোবেরা রহমান লিনুর আদি-অন্তু ! এতো জানার পরেও একটা মানুষের অনেক অজনা কথাই জানা হয়ে ওঠেনা। চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য তেমনি কিছু না জানা কথা বলেছেন বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের জীবন্ত কিংবন্তী।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ঢাকা সাইকেলিং ক্লাবের পক্ষ থেকে বৃক্ষ রোপণ করতে গিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অর্জুনা গ্রামে অবস্থিত গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের একটি কলেজে। সেখানে নানা বিষয়ে একান্ত ভাবে কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইন প্রতিবেদকের সাথে। তারই কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
চ্যানেল আই অনলাইন: চ্যানেল আই অনলাইন থেকে আপনাকে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা।
জোবেরা রহমান লিনু: আপনাকেও শুভেচ্ছো।
চ্যানেল আই অনলাইন: বর্তমান সময়ে আপনার ব্যস্ততার বিষয়ে কিছু বলুন।
জোবেরা রহমান লিনু: ঢাকা সাইকেলিং ক্লাবকে নিয়েই আমার ব্যস্ততা চলছে। বিভিন্ন সোস্যাল ওয়ার্ক করছি। ইভেন্ট করছি। এই ক্লাবটি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মাসুম নামের আমাদের অন্যতম একজন সদস্য ছিলেন যিনি এটি পরিচালনা করতেন। তার মৃত্যুর পর এখন আমাকেই ক্লাবটির হাল ধরতে হয়েছে। আর আমার সাথে শুরু থেকেই রিটু আছেন তাকে সাথে নিয়ে নতুন করে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: ক্লাবটি ঘিরে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি ?
জোবেরা রহমান লিনু: অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। আমরা আস্তে আস্তে এগিয়েও যাচ্ছি। আমি স্বপ্ন দেখি ক্লাবটি একদিন দেশের অন্যতম ক্লাবে পরিণত হবে। ঢাকা সাইকেলিং ক্লাব নাম হলেও শুধু আমরা সাইকেলিং নিয়েই কাজ করবোনা। সোস্যাল ওয়ার্ক ওরিয়েন্টেড কাজসহ তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় তৈরি করতে চাই। আবহানী, শেখ জামালের মতো এতো বড় না হলেও দেশের মানুষ যেন এক নামে ঢাকা সাইকেলিং ক্লাবকে চেনে। শুধু খেলাধুলার মাঝে আমরা সীমাবদ্ধ থাকতে চাইনা। আমি স্বপ্ন দেখি আমার ক্লাব থেকে জাতীয় দলের হয়ে প্রত্যেকটি ইভেন্টেই দু’চারজন ছেলে-মেয়ে অংশগ্রহণ করবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: ঢাকা সাইকেলিং ক্লাবকে নিয়ে এটাই কি প্রথম গ্রামে আসা ?
জোবেরা রহমান লিনু: না। আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময় গ্রামে গিয়েছি। আইলা-সিডর এলাকায় যেমন গিয়েছি তেমনি মাদকের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতনতা করার জন্য গ্রামে গিয়েছি।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনার যেহেতু মাদক নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার আলোকে বর্তমান পরিস্থিতির মূল্যায়ন কি?
জোবেরা রহমান লিনু: বর্তমান সময়ে মাদকের অবস্থা অতীতের চেয়ে খারাপ। যতদিন যাবে ততোই হয়তো খারাপ হবে। এর মূল কারণ মনে হয় বর্তমান সময়ে ছেলে মেয়েদের স্পোর্টিং মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসা। যে কোন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলে মাদক গ্রহণ করার প্রবণতা কম থাকে।
চ্যানেল আই অনলাইন: মাদক বিস্তারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিকদের প্রতি অভিযোগ রয়েছে। এবিষয়ে আপনার অভিমত কি ?
জোবেরা রহমান লিনু: ঢালাও ভাবে কাউকেই অভিযোগ করা ঠিক না। আমার যেটা মনে হয় তা হচ্ছে মাদক প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনীতিকদের স্বদিচ্ছা অবশ্যই থাকতে হবে। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে সোসাইটিকে সচেতন হতে হবে। ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলাসহ অন্যান্য সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। পড়শুনা আর খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকলে মাদক নেয়ার সময় পাবেনা।
চ্যানেল আই অনলাইন: বর্তমান সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আপনার অভিমত কি?
জোবেরা রহমান লিনু: আমার মতে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা যুগ উপযোগী নয়। এব্যাপারে একাধিকবার শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছি। পুথিগত শিক্ষাই শিক্ষা নয়। অনেককে দেখেছি বড় বড় ডিগ্রী নিয়েছেন কিন্তু এক লাইন ইংলিশ জানেন না। আমার মতে বেসিক নলেজটা জনা থাকা দরকার। হাটা-চলা, কথা বলা, ব্যবহার সবকিছুই শিক্ষার মধ্যেই পড়ে। আর এটা শুরু হওয়া উচিত প্রাইমারি লেভেল থেকেই। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার দৃষ্টান্ত কিন্তু দারুণ। আমাদের পড়শুনার ধরণ যেমন ঠিক না তেমনি স্কুলেও পড়শুনা হয়না। শুধু পুঁথিগত শিক্ষা দিচ্ছি প্র্যাকটিকাল শিক্ষায় শিক্ষিত করছিনা। আমারা একটা জোরালো দাবি করে আসছি তা’হলো খেলাধুলাকে সাবজেক্ট হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা। তাহলে শিশুরা বাধ্য হয়েই খেলাধুলায় মনোযোগী হবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: দিন দিন গুপ্ত হত্যা বেড়েই চলছে। আপনার ভিতরে কখনো এই ধরণের ভীতি কাজ করে কি’না ?
জোবেরা রহমান লিনু: আসলে এটা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই ইনসিকিরড। নানা কারণেই ঘর থেকে বের হয়ে কেউ বলতে পারবে না সে সুস্থভাবে ফিরবে। এই যে পুলিশ অফিসারে স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে তার স্বামীর উপর প্রতিশোধ নিতেই এমন করা হয়েছে। মানুষের ভিতর থেকে বিবেক জ্ঞান সব শেষ হয়ে গেছে। মানুষ মানুষকে খুন করা যেন ওয়ান-টু ব্যাপার হয়ে গেছে। যারা এই কাজগুলো করছে তারা আমার মতে রুট লেভেল থেকে মিসগাইটেড। তাই কে কোন দিক দিয়ে ছোবল দিচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছেনা।
চ্যানেল আই অনলাইন: এতো হতাশার পরেও কেমন দেখেন এই নতুন প্রজম্মকে ?
জোবেরা রহমান লিনু: আমি খুব আশাবাদী। আমাদের নতুন প্রজম্ম অনেক ইন্টিলিজেন্ট ও নলেজেবল। কিন্তু তাদের প্রোপার গাইড করা হচ্ছে না। এর জন্য অভিভাবকগণও কম দায়ী নয়। অভিভাবকগণ এখন এতোই বেশি ব্যস্ত যে তার সন্তানদের জন্য দশ মিনিট সময়ও ব্যায় করে না। সারাদিন তার সন্তানটি কি করলো সেই প্রশ্নটিও করেনা। কিন্তু এটা করা উচিত।
চ্যানেল আই অনলাইন: দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আরেকজন লিনু কেন তৈরি হচ্ছে না?
জোবেরা রহমান লিনু: ঠিকই বলেছেন অনেক বড় একটি গ্যাপ। আমার নতুন যারা তাদের দৃঢ়চেতা মনোভাবের বেশ অভাব। নিয়ম এবং সময়কে মেনে চলার প্রবনতাও কম। এই ধরুণ, আমি এখানো আসবো তার জন্য একদিন আগে থেকেই একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছিলো। কিছু পাবার, করার জন্য এই অস্থিরতা আমার সব সময়ই ছিল বলেই হয়তো আমি লিনু । আরেকটি বিষয় আমার পরিবারই ছিল একটি স্কুল। সেখান থেকেই জীবন সম্পর্কে আমার সব শেখা। যেটা এখন সময়ে তেমন চোখে পড়ে না। অন্যদিকে রুট লেভেল থেকে খেলোয়াড় তৈরি না হবার কারণ হলো তার জব সিকিউরিটি নাই। যখন আমরা এই কাজটি করতে পারবো তখন মনে হয় টেবিল টেনিসেও নতুন নতুন লিনু প্রতি বছরই জন্ম নেবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: সব শেষ প্রশ্ন। অজপাড়াগাঁয়ে এসে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের একটি কলেজ পরিদর্শন করে গেলেন কেমন লাগছে ?
জোবেরা রহমান লিনু: এক কথায় চমৎকার। আমরা বাবু ভাইয়ের এই কাজটির সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা ঘোষণা করেছি। আজ যেমন সহায়তা করেছি আগামী দিনগুলোতেও আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আশা করি এমন কলেজ সারা দেশেই গড়ে উঠুক।