প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হূমায়ুন আহমেদের স্ত্রী নির্মাতা ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের ত্বক কিংবা সৌন্দর্য নিয়ে কারও সংশয় থাকার কথা নয়। তবে শৈশব কিংবা কৈশোরে নিজেকে অত সুন্দর মনে করতেন না তিনি। কারণ তার গায়ের রঙ ছিল কালো। এই রঙ নিয়েই তার মনোবেদনার শেষ ছিল না। সে সময় তিনি যেটা মনে করতেন আজ তার চিন্তায় আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তিনি মনে করেন গায়ের রঙ কোনো বিষয় নয় মনের রঙ ভালো হলেই সবকিছু ভালো। এতদিন পর এসে আজ ফেসবুকে একটি ছবি দেখে সেই দিনগুলোকে স্মৃতিচারণ করেছেন। এক পোস্টে তিনি লিখেছেন—
আমার গায়ের রঙ কালো…ছোটবেলায়ও কালোই ছিল…
আম্মু বলত, “ছোটবেলায় তুমি কত্তো ফর্সা ছিলে… রিউমেটিক ফিভার হয়ে তারপরই না গায়ের রঙটা একটু শ্যামলা হয়ে গেলো…” (হাহাহা)। ‘শ্যামলা’, ‘উজ্জ্বল শ্যামলা’, ‘রঙটা এ-কটু ময়লা’, ‘তামাটে ত্বক’, ‘বাদামী ত্বক’ যাই বলা হোক না কেন.., সোজা বাংলায় ইহা কালোই…ছোটবেলায় মনটা মাঝে মধ্যেই এমন খারাপ হত…..১৯৯০ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় নাচের দুইটি বিষয়ে অংশ নিয়ে দুটিতেই দ্বিতীয় হয়েছিলাম…“যে প্রথম হয়েছে সে বেশি ভালো করেছে বলেই প্রথম স্থান পেয়েছে” এই কথা না বলে “মেয়ে কালো তো, যত ভালোই নাচুক ফার্স্ট হতে পারবে না” এ কথাই বলেছেন কেউ কেউ…
একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল আমার মা… আর আমার নৃত্য গুরু শুক্লা সরকার…তাঁরা আমাকে অনুপ্রাণিত করতেন… একমাত্র ভালো পারফর্মেন্স দিয়েই আমি প্রথম স্থান পেতে পারি সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন… তাই হয়তো পরের বারের নতুন কুঁড়ি তেই আমি ৩ টি নাচ, ১ টি গান আর ১ টি অভিনয় এ অংশ নিয়ে ৫ টি বিষয়েই প্রথম হয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে নিতে পেরেছিলাম…
আমার মধ্য থেকে গায়ের বর্ণ নিয়ে সমস্ত হীনমন্যতা কেটে গেলো…ততদিনে মা আমাকে নাওমি ক্যাম্পবেল চিনিয়েছে…হুমায়ূন আমার নাম দিয়েছে- “মায়াবতী”…হঠাৎ করেই একটি ফেসবুক পেজ আমার ছোটবেলার স্মৃতিটুকু তরতাজা করে দিল…নতুন কুড়ি ১৯৯০ এর একটি ছবি প্রকাশ করলো তারা…আমার কত্তো কত্তো ফেসবুক বন্ধু আমাকে ছবিটা দেখিয়ে এত্তো এত্তো শুভেচ্ছা জানালো…আজ হঠাৎ মূল লিঙ্কটাতে আমার চোখ পড়লো…আমার গায়ের রঙ কিংবা বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়.., হৃদয়ের রঙ আর অন্তরের সৌন্দর্য নিয়ে আমি গর্বিত, তৃপ্ত…সৃষ্টিকর্তা পরম করুণাময় আল্লাহ্র কাছে আমি ঋণী…
মেহের আফরোজ শাওনের পোস্ট
ছবি : সংগৃহীত