ঈদের পরদিন। ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসও ছিল সেদিন। একসঙ্গে কেঁপে উঠেছিল ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হল। ‘অলকা’, ‘ছায়াবাণী’, ‘পূরবী’ ও ‘অজন্তা’। কেঁপে উঠেছিল প্রায় একই সময়ে বোমা বিস্ফোরণে। ঘটনাস্থলে নিহত হন ৮ জন। হাসপাতালে মৃত্যু হয় আরো ১১ জনের। সব মিলে ১৯ জনের মৃত্যু আর দুই শতাধিক আহতের হৃদয়বিদারক ঘটনার ১৫ বছর পূর্ণ হল ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ সাল। সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউ কি কখনও তাদের খোঁজ নিয়েছে বা সে ঘটনার কথা মনে করে কি? বিচারের দাবীতে কোনদিন কোন কথা কি বলেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা?
পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, সিনিয়র চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব, হল মালিক সমিতির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে চ্যানেল আই অনলাইন।
পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘এমন ঘটনার ফলোআপ সব সময় রাখা উচিত ছিল। বিশেষ করে হল মালিক সমিতি বা পরিবেশক সমিতি তাদের নিজস্ব উপলব্ধি দরকার। আর আমরাও অনেক আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি। আহত বা নিহতদের খোঁজ খবর রাখতে পারতাম আমরা। কারণ তারা আমাদের সিনেমা পরিবারেরই তো অংশ।
হল মালিক সমিতির সভাপতি মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, আমাদের কমিটি সবে মাত্র দায়িত্ব নিয়েছে। সাত মাস হল। আগে যারা ছিলেন তারা কোনদিন এ বিষয়ে কথা বলেননি। চ্যানেল আই অনলাইনকে ধন্যবাদ এমন আঙ্গিকে বিষয়টি ভাবার জন্য। আমরা হল মালিক সমিতি নিহত এবং আহতদের পরিবারের খোঁজ নেব কথা দিচ্ছি।
নায়ক-প্রযোজক-পরিচালক সিনিয়র চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সোহেল রানা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের মন আর মন নেই মেশিন হয়ে গেছে। নিজের রক্তের সম্পর্ক এখন ভুলে যায় আর ১৫ বছর আগের বোমার ঘটনা কে মনে রাখবে? খোঁজ নেওয়ার সময় কি আমাদের আছে!
সেদিনের হামলায় আহত অনেকেই চিরতরে প্রতিবন্ধী হয়েছেন। অজন্তা সিনেমা হলের অপারেটর ফজল মিয়া দুই পা হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ফজল মিয়া বলেন, ‘পা নাই। আর কিছু নাই। সরকার থেকা তেমন কিছু পাই না। আর যে সিনেমা হলে কাম কইরা জীবন চালাইছি সে হল মালিকগুলার সমিতি ১৫ বছরে কোনদিন খোঁজই নেয় নাই।’ আমাদের তেমন কিছুই সাহায্য-সহযোগিতা করে না। তাই বেঁচে থেকেও পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-না-খেয়ে থাকতে হয়।’
মামলার আদ্যেপান্ত : বর্তমান সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। তিনি সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান, নতুন বছরের ১৮ জানুয়ারী মামলার সাক্ষ্য প্রদানের তারিখ রয়েছে। হামলার ঘটনায় প্রথমে চারটি মামলা হলেও পরে তা আটে রূপান্তরিত হয়। মামলা হয় বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও হত্যার অভিযোগে চারটি করে।
মামলার আসামিরা হলেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ ‘জেএমবি সদস্য’ আনোয়ার হোসেন ওরফে ভাগ্নে শহীদ, সালাহউদ্দিন আহম্মেদ ওরফে সালেহীন ও জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমা মিজান। আসামিদের মধ্যে ভাগ্নে শহীদ কারাগারে। আর সালেহীন ও বোমা মিজানকে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয় ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এর মাঝে বোমা মিজান ছিনিয়ে নেওয়ার পরদিন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
আটকের পর সালেহীন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের ৬ জুন জামালপুরের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জেএমবির তৎকালীন শূরা সদস্য সালেহীন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে চার সিনেমা হলে বোমা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। জবানবন্দীতে সালেহীন জানায়, ২০০২ সালে প্রথমে জামালপুরে ও পরে ময়মনসিংহে মিটিং করে চার সিনেমা হলে হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। তারপর প্রায় একই সময় হামলা চালানো হয়।
সে সময় এ ঘটনায় সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়।
ছবি: সংগৃহিত