অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে জয়ের পর টি-টুয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। পরের তিন ম্যাচে একটি জিতলেই নিশ্চিত হবে সিরিজ। সেরাটা দিয়ে খেলতে পারলে সিরিজ না জেতার কোনো কারণ দেখেন না বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টুয়েন্টি শুক্রবার। তার আগে সুখবর, শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছে বিসিবি। দেশের সেরা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ট্রফি নেন বোর্ড সভাপতি নিজেই। সেসময় টাইগারদের সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠের লড়াইয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলেছেন।
‘এমন একটা সময়ে, যখন আমরা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সাথে পরপর দুটি ম্যাচ জিতে এ পুরস্কার নিতে পারছি। উল্টোটাও হতে পারত। তখনও ভালো লাগত। কিন্তু জয় পাওয়া অনুভূতিটা অন্যরকম। সিরিজ কালকেই জিতব কিনা, বলা মুশকিল।
‘অস্ট্রেলিয়া অনেক পেশাদার একটা দল। ওরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই আমরা যেভাবে খেলে আসছি এবং আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে যদি খেলতে পারি, মনে করি আমাদের সিরিজ না জেতার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’
‘কিন্তু আমরা যদি কখনও মনে করি, একবারও যদি আমাদের মনে হয় যে, আমরা দুটো জিতেছি আর বাকিগুলোর যেকোনো একটিতে এমনি এমনি আমরা জিতে যাবো, তাহলে এ ধরনের চিন্তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সাথে জেতা যাবে না। আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।’
সম্প্রতি অভিজ্ঞদের সঙ্গে তরুণ ক্রিকেটাররাও জাতীয় দলে দারুণ অবদান রাখছেন। এ প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি বললেন, ‘তরুণ ক্রিকেটার, প্রথম যেটা হল, একটা জিনিস মনে রাখবেন যে একটা সময় ছিল যখন নাকি একজন ক্রিকেটার একটা দলকে জিতিয়ে দিতে পারত। কিন্তু এখনকার ক্রিকেট এতোই প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ, এখন কিন্তু একজন দুইজনে হয় না, দলগত প্রচেষ্টা লাগে।’
‘আমাদের সমস্যাটা হচ্ছে যে, অনেক সময় আমরা দেখেছি বেশিরভাগ সময়ে আমাদের যারা অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, বেশিরভাগ সময়ে তারাই ভালো পারফর্ম করে এবং ম্যাচ জিতে গেলে ওরা বাদে আর কে কি করলো সেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। কিন্তু যখন হেরে যায়, তখন ওরা পারফর্ম করে অন্যরা পারফর্ম করেনি, নতুন যারা তুলনামূলক তরুণ, তখন এদের নিয়ে আমরা হুলস্থূল করি।’
‘আরেকটা দিক থেকে খেয়াল করবেন, বহু ম্যাচ আমাদের যারা নতুন বা তরুণ, তাদের অবদানের জন্য যে কত ম্যাচ জিতেছি এর হিসেব নেই। হতে পারে তারা ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পারেনি, কিন্তু তাদের অবদান ছিল না এটা খুব কম সময়ই হয়েছে।’
‘গত ৮ বছরে যদি খেলাগুলো দেখেন, সৌম্যর জন্য আমরা সাউথ আফ্রিকার সাথে ম্যাচ জিতিনি? তখন তো চিন্তাই করা যেত না যে আমরা তাদের বিপক্ষে ম্যাচ জিতবো। মোস্তাফিজ তো আমাদের অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে, সেটা নিয়ে তো সন্দেহ নেই। শরিফুল কি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেনি? তাসকিন যে ফেরত এসেছে সেটা কী আমাদের জন্য ভালো না!’
‘নাসুমের কথা যদি বলি, আমাদের তো অভিজ্ঞ তাইজুল আছে, প্রুভেন মিরাজ আছে, তাও আমরা নাসুমকে খেলাচ্ছি। আমরা শেখ মেহেদীকে খেলাচ্ছি, আফিফ ধারাবাহিকভাবে ভালো করে আসছে। শামীম জিম্বাবুয়েতে ভালো খেলেছে।’
‘নতুন কেউ এসেই টানা ভালো করবে এটা তো প্রত্যাশা করাই উচিত না। আমাদের কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে, যারা ২০০এর মতো ম্যাচ খেলে ফেলেছে। আমাদের যে টিমটা খেলছে, যদি এক এক করে দেখেন- সৌম্য, নাঈম, সাকিবের পর রিয়াদ, এরপর সোহান আছে, আফিফ আছে, আফিফের পর শামীম আছে।’
‘এই শামীম, আফিফ, নাঈম, মেহেদী- এরাতো এসব বড় খেলোয়াড়দের সামনে খেলা দূরে থাক, দেখা হয়েছে কিনা সন্দেহ। মিচেল স্টার্ক, হ্যাজেলউড, জাম্পা, ওদের টপ ক্লাস বোলার। প্রথমে নেমে সাহস করে খেলছে এটাই তো অনেক ব্যাপার। আগে তো বাংলাদেশ খেলতে নামলেই আমরা ভাবতাম বাংলাদেশ হেরে যাবে।’
‘হারা মেনে নিয়েই খেলতাম। কিন্তু এখন এই যে হার জিত বড় কথা না, ছোট ছোট তরুণ ছেলেগুলো যে সাহস নিয়ে মাঠে নামে, ফিল্ডিং যে দেয়, তাদের সমস্তটা দিয়ে ফিল্ডিং করছে। এই সিরিজে বোলিং এবং ফিল্ডিং অনেক ভালো করেছে। ব্যাটিং কিন্তু ভালো হয়নি। কিন্তু আশা করি সামনে ভালো হবে আরও।’
‘তবে আমার যেটা ভালো লেগেছে, মাঠে নামলে যে জিততে পারি, জেতার জন্য খেলবো, এই বিশ্বাসটা থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই জিনিসটা ছিল মাঠে, মাঝের একটা বছর একটু কেমন যেন হয়ে গিয়েছিল, এখন ঠিক হয়ে গেছে।’
‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতার পর আমার মনে হয় তরুণদের বিশ্বাসটা আরও বেড়ে গেছে। ওরা এখন নামেই জেতার জন্য, যার সাথে হোক ভয় পায় না।’ বলেন নাজমুল হাসান।