আগামী সপ্তাহের সংসদীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নিজের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণের যুদ্ধে নামছেন দেশটির বিতর্কিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহেন্দ্র রাজাপাকসে।
বিশ্লেষকদের ধারণা এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে আবারও ফিরতে পারে রাজাপাকসে যুগ।
রাজাপাকসে ২০০৯ সালে তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ী হয়ে শ্রীলঙ্কায় ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। এরপর নিজেই নিজেকে যুদ্ধজয়ী রাজা ঘোষণা করেন তিনি।
প্রথমদফায় রাজাপাকসের নির্বাচনে জয় লাভের ভয়ানক মূল্য দিতে হয় তামিল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, কয়েক সপ্তাহের ওই যুদ্ধে ৪০ হাজারের বেশি বেসামরিক তামিল নিহত হয়।
তামিল যুদ্ধ জয়ের ফলে সিংহলিজদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান রাজাপাকসে। তবে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর রাজাপাকসে যখন নিজে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদচ্যুত হয়ে বড় ছেলেকে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা করছিলেন তখনই ঘটে বিপর্যয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার সরকারের নীরব এক ব্যক্তি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাইথ্রিপালা সিরিসেনা অপ্রত্যাশিতভাবে জিতে যান। জিতেই সাবেক রাজনৈতিকগুরুর বিপক্ষে দাঁড়ান সিরিসেনা।
তবে আবারও ফিরছেন মাহেন্দ্র রাজাপাকসে। আগামী সপ্তাহের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পদে নয় এমপি পদে। ক্ষমতার নিরিখে প্রেসিডেন্ট ও এমপি পদের ফারাক থাকলেও এই ছোট পদের (এমপি) আলোচনা এখন শ্রীলঙ্কার রাজনীতির লাইমলাইটে।
নির্বাচনে দল যদি প্রয়োজনীয় আসনে জিততে পারে তাহলে রাজাপাকসে হবেন প্রধানমন্ত্রী। রাজাপাকসে অবশ্য বলেছেন ক্ষমতা জন্য নয়, বরং জনগণের দাবির কারণেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।
তিনি বলেন, চিন্তা করেছিলাম অবসর নেব। কিন্তু যখন নিজের গ্রামে গিয়ে দেখলাম বহু মানুষের ভিড়। তখন বুঝলাম আসলে তারা আমাকে চায়।
সেটা একটা কারণে হতে পারে। তবে রাজাপাকসের ক্ষমতায় ফিরে আসার আরো অনেক কারণ আছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপাকসের পরাজয়ের পরই তার খ্যাতির ওপর আক্রমণ শুরু হয়। তার দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এমনকি খুনের অভিযোগ ওঠে। তারা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
রাজাপাকসে যখন নিজের স্টাইলে নতুন শ্রীলঙ্কার জাতির পিতা হতে যাচ্ছিলে তখন তার বিরুদ্ধে মহা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তবে রাজাপাকসে বলেন, তিনি বিরোধীদের অপপ্রচারের শিকার।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই রাজাপাকসে অতি সহজেই হয়তো এমপি হবে। শুধু এমপি নয় এই নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি ফের প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হিসাবে নিজের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছেন।
এই ছোট নির্বাচনের বিভিন্ন জনসভায় রাজাপাকসে অবিরাম ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন। সভাগুলোতে তার সমর্থকদের দারুণ উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। নেতা ও তার সমর্থকদের এই দৃশ্য টেলিভিশনের পর্দায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে।
জনসভায় নতুন সিরিসেনা সরকারের দুর্নীতির কথা ব্যাপকভাবে তুলে ধরছেন রাজাপাকসে। সরকার বন্ড বিক্রি কেলেংকারির সাথে জড়িত এমন অভিযোগও করেন তিনি।
সিরিসেনা সরকারের বিরুদ্ধে তামিল কার্ডকে বড় করে খেলার চেষ্টা করছেন রাজাপাকসে। তিনি বলছেন, বর্তমান সরকার উত্তরাঞ্চীয় তামিলদের শক্তি বৃদ্ধি করছেন, এর ফলে জাতিকে আবারও দ্বিখণ্ডিত করবে।
সংসদীয় নির্বাচনে নিজের আসনে রাজাপাকসে হয়তো সহজেই জিতবেন। তবে সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, সব মিলিয়ে তার দল যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। তবে জরিপ যাই বলুক, কথায় আছে যুদ্ধের ঘোড়া কখনো ক্ষান্ত দেয় না।
(জাস্টিন রাওলাটের লেখা)