বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় মোট ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিচ্ছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মোটিভ হিসেবে একক কোনো কারণ খুঁজে পায়নি পুলিশ। অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টিতেই আবরার ফাহাদকে পেটানো হয়। পাশাপাশি হত্যায় জড়িতরা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে। যাদের সবাই উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত ছিল।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরেকটু মনিটরিং করলে এই ঘটনা এড়ানো যেত। তদন্তে তাদের ব্যর্থতাও পাওয়া গেছে।
বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মোট ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আমরা আদালতে চার্জশিট দিচ্ছি। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের বাইরে ঘটনার তথ্য প্রমাণে আরো ৬ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহার বহির্ভুত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অর্থাৎ এ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং পলাতক রয়েছেন ৪ জন।
‘‘ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্যপ্রমাণ ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আবরার ফাহাদকে মারধরের সঙ্গে সরাসরি ১১ জন জড়িত ছিলেন। বাকিরা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ঘটনার পরিকল্পনা এবং নির্দেশনার সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে সম্পৃক্ত।’’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের ভাষ্যমতে আবরার ফাহাদ দেখা হলে বড়দের সালাম দিতো না। বিভিন্ন তীর্যক মন্তব্য করতো। আগে থেকেই তারা নানা কারণে আবরার ফাহাদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। অনেকগুলো বিষয়ের সমষ্টিতেই আবরার ফাহাদকে পেটানো হয়।’
‘‘একজনকে মেরে অন্যজনকে শিক্ষা দিতে কিংবা জুনিয়রদের মধ্যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে তারা দীর্ঘদিন ধরে র্যাগিংয়ের নামে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। যার আচরণ অপছন্দ হতো তাদেরকেই ডেকে এনে নানা নির্যাতন করা হতো। অন্য কেউ এমন অভিযোগ করলেও আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখব।’’
ঘটনার দিন রাত ১০টার পর থেকে আবরার ফাহাদকে মারধর শুরু করা হয় জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে বুয়েটের ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হল-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরেকটু মনিটরিং করলে এ ঘটনা এড়ানো যেত। তদন্তে আমরা তাদের ব্যর্থতা দেখেছি।’
‘‘এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তাদের গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নিতে পারে। এটা পুলিশের বিষয় নয়।’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাত তিনটার দিকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়, শিবির সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের টহল টিম হলের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করে। কিন্তু পরে জানানো হয়, সেখানে কিছু হয়নি। তিনটার আগে পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানতে পারেনি।’
গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার কয়েকজন নেতাকর্মী।
ওই ঘটনায় নিহতের বাবা মো. বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।