“ধর্ষিতা হওয়ার খুব ইচ্ছা নাকি?” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর টিএসসির সান্ধ্য আইন বিষয়ে ফেসবুক পোস্টের কমেন্টে এই বাক্য লিখেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেহেদি হাসান সোহাগ নামের এক ছাত্র। তার এই মন্তব্যের নিচেই সমর্থনসূচক মন্তব্যে মামুন আব্দুল্লাহ নামের একজন লিখেছেন,“যৌবনের জ্বালা সহ্য করতে না পারলে কী করার আছে?”
“বাস্তবতা জানি বলেই অচেনা লোকদের এসব মন্তব্য আমার মনে ব্যাথা দিলেও একেবারে ভেঙে পড়িনি”, নিজের ফেসবুক পোস্টে আসা মন্তব্যগুলো সম্পর্কে চ্যানেল আই অনলাইনকে এই কথা বলেছেন এই ঢাবি শিক্ষার্থী।
তবে “আপু রাইতের কাম উদ্যানেও করা যায়, ৮টার পর উদ্যানে যাইয়েন!” বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগের তাঈফ নামের এক জুনিয়রের এই মন্তব্য তাকে হতবাক করেছে বলে জানান এই নারী শিক্ষার্থী।
নিজে যখন এরকম কুরুচিপূর্ণ বাক্যবাণে জর্জরিত তখন নিজের চেনা-অচেনা কয়েকজন নারী ‘বিনোদন’পাচ্ছেন এমন মন্তব্য করাকে মেনে নিতে এখনো কষ্ট হচ্ছে তার।
নারী হয়েও আরেকজন নারীর প্রতি অপমানজনক শব্দে এই ‘বিনোদন’ প্রকাশ করেন একজন নারী।
পোস্টের স্বপক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরেও ছাড় পাননি ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থী। উল্টো তিনি আরেক নারীর আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী মাইমুনা ইনসান মন্তব্য করেন,“আপি (আপু) ছেলেরা খালি গায়ে ঘুরে আপনিও খালি গায়ে ঘুইরা অধিকার নিশ্চিত করেন।”
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে রাত ৮ টার পর নিষেধাজ্ঞার নোটিশ জারির পর এর প্রতিবাদকারী নারীদের পোস্টে প্রায় একই রকম মন্তব্যের তীর বর্ষণ শুরু হয়।
শুধু ভুক্তভোগী ওই নারী শিক্ষার্থীর টাইমলাইনেই নয়। নারীদের প্রতি ফেসবুকে সরাসরি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বা মন্তব্যগুলোর স্ক্রিনশট দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে।
উন্নত দেশগুলোতে ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমে এই ধরণের কুরুচিপূর্ণ এবং আপত্তিকর মন্তব্যকে সাইবার অপরাধের একটি ধারা হিসেবে দেখা হয়। সাইবার অপরাধের এই ধারার সুপরিচিত নাম ‘সাইবার বুলিং’।
ঢাবির এই নারী শিক্ষার্থীর মতো অসংখ্য নারী প্রতিদিন সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
সাইবার বুলিংয়ের মতো নতুন ধারার সাইবার অপরাধ এদেশের সামাজিক মাধ্যমেও জেঁকে বসেছে বলে মন্তব্য করেন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
মঙ্গলবার রাজধানীতে ৮ম এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সাইবার নিরাপত্তা ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন,‘সামাজিক মাধ্যমে সাইবার বুলিং (আপত্তিকর মন্তব্য), মানহানী,ঘৃণা ছড়ানো পোস্ট, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
সাইবার বুলিং, অনলাইন হয়রানি-নির্যাতন ঠেকাতে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে নতুন ধারা এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন তথ্য-প্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন,‘সামাজিক মাধ্যমে নারীর প্রতি ধর্ষণসহ অন্যান্য শব্দে যে আক্রমণ তাকে কেবল কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বলা যাবে না। এটা নির্যাতন। নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করা দেশগুলোতে সাইবার বুলিং বিরোধী কঠোর আইন আছে। আমাদের দেশে এধরণের সাইবার অপরাধ দমনের জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে নতুন ধারা ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রস্তাব করেছি আমরা। তবে এখনো আইনটি পাশ হয়নি। পাশ হলে যে কেউ সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে।’
সাইবার বুলিংসহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিতর্কিত ৫৭ ধারা রয়েছে, যার মাধ্যমে হয়রানি ও মানহানির শিকার ব্যক্তি আইনী পদক্ষেপ নিতে পারেন। যদিও ওই ধারাটির ব্যবহার ও প্রেক্ষাপট নিয়ে নানা বিতর্ক আছে।