নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনাদের নাম সুপারিশ করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন, রোববার সেই কমিটি প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছে। প্রাথমিকভাবে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নাম খুঁজে বের করতে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গেও আলোচনায় বসবে কমিটি। নিঃসন্দেহে এটা চমৎকার সিদ্ধান্ত।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, একদিন আগে গঠিত সার্চ কমিটির সভাপতি হয়ে নেতৃত্বে দিচ্ছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সদস্য হিসেবে আছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
মূলত এই কমিটির কাজ হবে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের ৪টি পদের বিপরীতে প্রতিটি পদের জন্য দুটি করে মোট ১০টি নাম প্রস্তাব করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো। সেই নামগুলোর মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচজনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।
বাংলাদেশের জন্মের ৫০ বছর পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে কোনো আইন ছিল না। গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে পাস হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল- ২০২২’। ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তা ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন- ২০২২’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
আর মাত্র কয়েকদিন পরই কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। যে কমিশনের অধীনে হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও সহিংসতা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে। সমালোচনা আছে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও। এমনকি এই কমিশনের একজন সদস্য ধারাবাহিকভাবে চলতি কমিশনের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে গেছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বোঝা যায়, কতটা জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এই সার্চ কমিটিকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কেননা সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম বাছাই করা কমিটির জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। যদিও এরই মধ্যে কমিটির সভাপতি জানিয়েছেন, সবার সহযোগিতা নিয়ে এই গুরু দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করতে চান তারা।
এটা ঠিক কমিটি শুধু মাত্র ১০টি নামই খুঁজবেন না, সেই নামের সাথে সাথে খুঁজবেন তাদের সততা, যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা, সর্বপরি দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি সেই ব্যক্তিদের দায়িত্ববোধ। কেননা সেই ১০টি নামের মধ্যে থাকা যে কোনো পাঁচজনের কাঁধে থাকবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সুকঠিন এক দায়িত্ব। আর এজন্যই সার্চ কমিটির দিকে তাকিয়ে আছে সারাদেশের মানুষ।
আমরা আশাবাদী, কঠিন এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হবে সার্চ কমিটি। তাদের দেওয়া নামের তালিকায় গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে।