চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যা ঘটেছে, যা ঘটতে যাচ্ছে

২০১৭-তে আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কাতালোনিয়া এবং আধুনিক জিম্বাবুয়ের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট মুগাবের পদত্যাগ। পুরো মুসলিম বিশ্বকে অস্থির করে দিয়ে গেছে কাতার আর জেরুজালেম সংকট। অন্যদিকে আরব বিশ্বে এবার লেগেছে ব্যাপক পরিবর্তনের হাওয়া। সঙ্গে বছরজুড়ে ছোটবড় সন্ত্রাসী হামলা তো ছিলই। এসব ঘটনা ২০১৮-তে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কী প্রভাব রাখবে সেটাও বিবেচনার বিষয়।

কাতালোনিয়া
স্পেনের আংশিক-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়া অক্টোবরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও যথেষ্ট সমর্থনের অভাবে শেষ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। বরং আগে থাকা স্বায়ত্তশাসনটাও হারিয়ে বসে অঞ্চলটি। স্পেন সরকার একদিকে আঞ্চলিক সংসদ বিলুপ্ত করে কাতালোনিয়ায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে। অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমনসহ বহিস্কৃত নেতারা পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে। পরে অবশ্য তারা ফিরে আত্মসমর্পণ করেন।

নতুন আঞ্চলিক নির্বাচনে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাপন্থি দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও স্পেনপন্থিরাও বড় একটি অংশ। সেহেতু ২০১৮’র মধ্যে অঞ্চলটি স্পেনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে পারে এবং পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ।আন্তর্জাতিক অঙ্গন-সালতামামি-ফিরে দেখা ২০১৭

জিম্বাবুয়ে মুগাবে সমাচার
নভেম্বরের মাঝামাঝিতে জিম্বাবুয়ের রাজপথ দখলে নিয়ে ৯৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে সপরিবারে গৃহবন্দী করে সেনাবাহিনী। গৃহবন্দী অবস্থায় সেনাবাহিনী ও নিজ দলের চাপে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে রাজি হলেও জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, ডিসেম্বরের আগে পদ ছাড়বেন না তিনি।

ক্ষমতাসীন দল প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অভিসংশনের হুমকি দিলে মুগাবে অনেকটা হঠাৎ করেই ২১ নভেম্বর ৩৭ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে পদত্যাগ করেন। মুগাবের জায়গায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তার হাতেই বরখাস্ত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নাঙ্গাগওয়া

মুগাবের ক্ষমতাচ্যুতি চেষ্টায় তেমন কোন রক্তপাত না ঘটায় একে ইতিবাচক হিসেবে দেখে আশেকা বলেন, নতুন সরকারের কাজকর্ম জনগণের বুঝে উঠতেই আগামী বছরের অনেকটা কেটে যেতে পারে। তবে প্রথমদিক হিসেবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের কিছু আশা রয়েছে।আন্তর্জাতিক অঙ্গন-সালতামামি-ফিরে দেখা ২০১৭

কাতার সংকট
সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও ইরানের সঙ্গে মিত্রতা বাড়ানোর অভিযোগে ৫ জুন কাতারের উপর সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিশর বাণিজ্য ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যদিও বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাতার। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিও করে। নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে কাতারের হজযাত্রীদের প্রথমে মক্কায় প্রবেশে বাধা দিলেও পরে মুসলিম বিশ্বের সমালোচনার মুখে তা তুলে নেয় সৌদি।

কাতারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা পরিষদ শুরা কাউন্সিলে ইতিহাসে এই প্রথম নিয়োগ পান চার নারী সদস্য।আন্তর্জাতিক অঙ্গন-সালতামামি-ফিরে দেখা ২০১৭

সৌদি প্রশাসন ও রাজনীতি
এ বছর সৌদি আরবের রাজপরিবারের ক্ষমতার ধারা, প্রশাসন আর রাজনৈতিক অবস্থানে ঘটেছে চোখে পড়ার মতো সব পরিবর্তন। নারীদের গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা, স্টেডিয়ামে খেলা দেখার অনুমতি, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অবশেষে সিনেমা হল চালুর সিদ্ধান্ত… এ তো কেবল শুরু!

ভাতিজাকে সরিয়ে বাদশাহ সালমান নিজের ছেলে মোহাম্মদকে যুবরাজ ঘোষণার পর থেকেই মূলত এই পরিবর্তনগুলো আসতে থাকে। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা থেকে বহু অভিজ্ঞ মন্ত্রীকে অবসর দিয়ে সেই পদ অন্যদের দেয়া হয়।

ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব ছড়ানো ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফর সৌদি এ বছর আরবেই। সফরে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা, স্থিতিশীলতা এবং আরব বিশ্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে সৌদির সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননাও দেয়া হয়।আন্তর্জাতিক অঙ্গন-সালতামামি-ফিরে দেখা ২০১৭

সৌদি আরবকে সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণার পাশাপাশি বহুযুগের কট্টরপন্থি ওয়াহাবি ইসলাম থেকে সরে ‘মধ্যপন্থি ইসলাম’ গ্রহণের ঘোষণা দেন যুবরাজ। অন্যদিকে যুবরাজকে প্রধান করে দুর্নীতি দমন কমিটি গঠনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় ১১ প্রিন্স ও ৪ মন্ত্রীসহ কয়েক ডজন সাবেক মন্ত্রী-ব্যবসায়ীকে আচমকা গ্রেপ্তার, পরদিন ইয়েমেন সীমান্তের কাছে অনুসন্ধান কাজ শেষে ফেরার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দলবলসহ এক প্রিন্স নিহত, তার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই গ্রেপ্তার অভিযানে আরেক প্রিন্সের মৃত্যু, শেষে পাঁচতারকা হোটেলে মেঝেতে ঘুমানোর শাস্তি দিয়ে শত বিলিয়ন ডলার জরিমানায় আটক প্রিন্সদের মুক্তিদান– এমন অনেকগুলো ঘটনা একসঙ্গে ঘটতে দেখল বিশ্ব।

জেরুজালেম: ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আগুনে ঘি
ডিসেম্বরের শুরুতে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপরই মুসলিম বিশ্বসহ পৃথিবীজুড়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমনকি আমেরিকানরাও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিরোধিতা জানায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্যরাষ্ট্রগুলো। এমনকি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয় ওআইসি। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ইসরায়েলও সরে আসে ইউনেস্কো থেকে।আন্তর্জাতিক অঙ্গন-সালতামামি-ফিরে দেখা ২০১৭

অবশেষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ভোটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে। যদিও ভোটাভুটির আগেই জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলি হুমকিপত্র পাঠান সাধারণ পরিষদের সব সদস্যের কাছে। সেখানে বলা হয়, জেরুজালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেসব দেশ ভোট দেবে তাদের দেখে নেবে ট্রাম্প সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র না করলেও হঠাৎ করেই ২৪ ডিসেম্বর জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণা দিয়েছে গুয়েতেমালা। এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

জেরুজালেম ও আরব বিশ্ব ইস্যুতে আশেকা ইরশাদ বলেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতিকে অনেকেই ‘মার্কিন-ইসরায়েল-সৌদি চক্রের’ কাজ বলে মনে করেন। ‘সৌদির রাজনীতিতে ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোর প্রতীকী গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে। তবে বাস্তবে এগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা সময়ই বলবে। এগুলোর পাশাপাশি আগামী সময়টাতে নারী অধিকার ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রশাসনের মৌলিক পর্যায়েও যদি পরিবর্তন আসে তখনই একে ইতিবাচক বলা যাবে।আন্তর্জাতিক অঙ্গন-সালতামামি-ফিরে দেখা ২০১৭

প্যারাডাইস পেপারস
বিশ্বের রাজনীতিবিদ, সেলেব্রিটি ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের গোপন সম্পদের তথ্য নিয়ে গত বছরের পানামা পেপারসের মতো এবার আলোচনায় ছিল প্যারাডাইস পেপারস। এখানেও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।

বছরজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা
বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে আরিয়ানা গ্রান্দের কনসার্টে হামলা, মিশরের সিনাইয়ে মসজিদে ও সোমালিয়ার মোগাদিসুতে ট্রাক বোমা হামলা, ইরানের পার্লামেন্ট ভবন, ইরাকের মসুলের ঐতিহ্যবাহী আল নূরি মসজিদ ধ্বংসহ বিভিন্ন দেশে জঙ্গি হামলা।আন্তর্জাতিক অঙ্গন-সালতামামি-ফিরে দেখা ২০১৭

এ বছরই আফগানিস্তানে আইএস স্থাপনায় সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমা ‘মাদার অফ অল বম্বস’ নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এপ্রিলে সিরিয়ার ইদলিবে সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলায় ৭২ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় সাড়ে ৫শ’র বেশি মানুষ।