মারা গেছেন কবি, লেখক ও বিজ্ঞাপন জগতের পরিচিত ব্যক্তিত্ব আদিত্য কবির। বুধবার ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক করে মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
খবরটি চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন আদিত্য কবিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এরশাদুল হক টিংকু।
বুধবার বিকেলে তিনি জানান, আদিত্য কবিরের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তার ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছি। বিকেলে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে মোহাম্মদপুর বাবর রোডের আল মারকাজুল ইসলামে। এখানে জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গ্রিন রোডে তার মা সুলতানা রেবুর কাছে। সেখানে তার মাকে দেখিয়ে আদিত্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে রায়ের বাজার কবরস্থানে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে।
আদিত্য কবির প্রগতিশীল কবি, রাজনীতিবীদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রয়াত হুমায়ূন কবিরের ছেলে। শুরুতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন আদিত্য কবির। কাজ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে।
পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ক্যারিয়ার গড়েন। অ্যাসোসিয়েট ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিকে।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্রের মানুষেরা।
এরমধ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘‘আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেক বিষয়েই আগানো ছিলো আদিত্য, যারে লোকে আদিত্য কবির নামে জানতো! চলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দেখা গেলো ও-ই আগানো!আদিত্য’র কথা ভাবলে দেখতেছি আমার শীতের কথাই মনে পড়তেছে! এমন না যে, আমাদের শাহবাগের দিনগুলা কেবল শীতেরই ছিলো! তারপরও আজকে কেবল শীতের সন্ধ্যায় শিশিরে পা ডুবাইয়া হাঁটার কথা মনে পড়তেছে! হাঁটতে হাঁটতে উদ্যান, নজরুল, মোল্লা, হাকিম, জিমনেশিয়াম, কাঁটাবন, আজিজ, লাইব্রেরি, রোকেয়া, শামসুন্নাহার, মল, মধু, আইবিএ, বাবুল, দোয়েল সব পার হইয়া আদিত্য দুনিয়ার বাইরেই চইলা গেলো! হোয়াট দ্য হেল, আদিত্য!’’
গল্পকার রোকন রহমান লিখেছেন, ‘‘নয় দশকের গোড়াতে কিছু অসাধারণ প্রতিভাবান বন্ধুর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশের মূল ধারায় অতি উজ্জ্বল ভূমিকা রাখতে পারত। শিল্প সাহিত্যে সমাজ রাজনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে অগাধ জ্ঞান পাণ্ডিত্য নিয়েও কিছুই করলো না তারা। একটা নষ্ট গলিত মধ্যযুগীয় সমাজে তাদের কোনো জায়গা হয়নি। অনেকে চমৎকারভাবে এই সমাজের রথীমহারথী হয়ে গেছেন। যে প্রতিভাগুলোকে সমাজ সহ্য করতে পারেনি তারা এই বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ ছিল। তারা গণমাধ্যমে নতুন যুগের সূচণা করেছিল। তোর সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা ছিল সহসা। এত দ্রুত অভিমানটা বিচ্ছেদে নিয়ে গেলি ঘুমের মধ্যে। আদিত্য বন্ধু আমার! অবিশ্বাস্য সংবাদ নিয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।’’
গণমাধ্যমকর্মী তুষার আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘‘আদিত্য দা (আদিত্য কবির) এটা কী হলো? সেই ভোরের কাগজের কাল। সঞ্জীব দা, মুনীর রানা আপনি আমি আমাদের কতো গল্প। আপনার স্পোটর্স রিপোটিং। একসঙ্গে দুজনের মেলা পাতায় লেখা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ক্রোড়পত্র দুজনের ভরাট করে দেয়ার কথা। আপনি উধাও। রাতভর সঞ্জীব দা আর আমি সামাল দিলাম। আপনি উধাও হতেন, আর আমি আপনাকে খুঁজে বের করতাম। জোর করে নিয়ে এসেছিলাম সময় সংলাপে। কী তুমুল আড্ডা! ঈশ্বরের নাম বিজ্ঞাপন লেখার সময় ২০১৮ এর শেষ ভাগ পর্যন্ত নিয়মিত কতো কথা টেলিফোনে। আলী যাকের ভাইয়ের সঙ্গে সময় সম্পাদকীয় করতে গিয়ে এশিয়াটিকের নিচে দেখা। সংক্ষিপ্ত আড্ডা। বলেছিলেন নীতি নৈতিকতা ও জ্ঞান শূন্য সমাজের কথা। গণমাধ্যমের মুর্খ্যতা এবং নষ্ট হয়ে যাবার কথা। সঞ্জীব দা’র মতো গণমাধ্যম আপনাকেও মূল্যায়ণ করতে পারেনি। আমরা যারা জানি আপনাকে, তারাতো নিশ্চিত করেই জানি গণমাধ্যমে আপনার মতো দ্বিতীয় প্রতিভা …। না, নেই। অভিমান করে ঘুমের মধ্যে একদম যেন টিলোএক্সপ্রেস খেলার মতো চলে গেলেন। ভালই করলেন হয়তো… নষ্টপুরে কেন জীবনের অপচয়!’’