আদালত কেন্দ্রিক আমাদের বিচার ব্যবস্থা জটিল এবং প্রচুর সময় ও অর্থ সাপেক্ষ বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বিরোধ নিস্পত্তিতে মেডিয়েশনের ভুমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি এ কথা বলেন।
বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল বলেন: সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭ মোতাবেক সকল নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারি যা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাস্তব সত্য হল, এদেশের বেশিরভাগ নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত। কেননা আদালত কেন্দ্রিক আমাদের বিচার ব্যবস্থা এত জটিল এবং প্রচুর সময় অর্থ সাপেক্ষ যে সাধারণ মানুষ আদালতের দরজায় পৌঁছাতেই পারে না। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না বর্তমানে আমাদের যে, আদালত কেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা তা শুধুমাত্র হাতেগোনা কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণির এবং আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান জনগণের জন্য। এমনকি ৩০ লক্ষাধিক মামলায় ভারাক্রান্ত আদালত থেকে সেই হাতেগোনা মানুষও সময়মতো বিচার পাচ্ছেন না। এমন একটি অবস্থায় আমি মনে করি বিরোধ নিষ্পত্তিতে মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা পদ্ধতি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম পদ্ধতি হিসেবে জনগণের আইনের সমান অধিকার প্রাপ্তিতে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
এ সময় বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল আরো বলেন: মধ্যস্থতা বা মেডিয়েশন হোক মূল ধারার বিরোধ নিস্পত্তির মাধ্যম। আর প্রচলিত আদালত ব্যাবস্থা হোক বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির মাধ্যম।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ ইমান আলী বলেন: মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় কোন বিরোধ নিস্পত্তি হলে সেখানেই বিরোধের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু আদালত কেন্দ্রিক বিচার ব্যবস্থায় নিস্পত্তির ক্ষেত্রে আপিল বিষয়ক পর্যায় থাকে। যার ফলে বিরোধ নিস্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়। দেশে বর্তমানে ৩৫ লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন। মামলার আধিকার এমন প্রেক্ষাপটে বলতেই হয়, ‘জাস্টিস ইস বাউন্ড টু ডিলেইড।’ তাই এক্ষেত্রে বলা যায় মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতায় বিরোধ নিস্পত্তি হতে পারে এক অনন্য মাধ্যম।
আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পঙ্কজ কুমার কুণ্ড। অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।