হাজার হাজার ভক্তের অশ্রুমাখা ফুলেল শ্রদ্ধায় প্রিয় শহর লুইসভিলে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ‘দ্য গ্রেটেস্ট’। কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলীকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে তার নিজ শহর লুইসভিলের কেভ হিল সেমেট্রিতে দাফন করা হয়েছে।
দাফনের সময় আলীর পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন। ধর্মীয় পরিচয়কে ছাঁপিয়ে আলীর জন্য আয়োজিত সর্বধর্মীয় প্রার্থনায় উচ্চারিত হলো মানবতার জয়গান।
দাফনের আগে মোহাম্মদ আলীর মরদেহ লুইসভিল শহরে ছড়িয়ে থাকা তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে। এর মধ্যে ছিলো, আলীর ছোটবেলার বাড়ি, আলি সেন্টার এবং দ্য সেন্টার ফর আফ্রিকান আমেরিকান হেরিটেজ।
কফিনটি যাওয়ার সময় রাস্তার দুই ধার হাজারো মানুষ ‘আলী-আলী’ ধ্বনি এবং হাত তালিতে তাদের ‘চ্যাম্প’কে বিদায় জানায়। দাফন অনুষ্ঠানের ১৫ হাজার টিকেট শেষ হয়ে যায় আধ ঘণ্টার মধ্যেই। আলীর কফিনবহনকারী ১৮ টি গাড়ির একটি বহর ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। প্রায় ৯০ মিনিট ধরে চলে এই আনুষ্ঠানিকতা। অনেকেই কফিনবাহী গাড়ির ওপর ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন।
দাফনের আগে মোহাম্মদ আলীর কফিন বহন করেন হলিউড অভিনেতা উইল স্মিথ এবং সাবেক বক্সার মাইক টাইসন ও লেনক্স লুইসের মতো তারকারা। দাফনের পর এক স্মরণ সভায় অংশ নিয়ে মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বিল ক্লিনটন, হামিদ কারজাইসহ আরও অনেকে।
পারিবারিক কারণে প্রিয় ব্যক্তিত্বের অন্তিম শয়ানে আসতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তবে এক ভিডিও বার্তায় ওবামা বলেন,‘ আমরা একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছি। তাঁর জন্য আফ্রো-আমেরিকানরা গর্বিত । মোহাম্মদ আলীকে দেখে বড় উঠেছি। তাঁর অর্জন তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।’দাফন অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মোহাম্মদ আলীর জন্য সর্বধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নেন মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ নানা ধর্ম-মতে বিশ্ববাসীরা। দাফন অনুষ্ঠান মনমতো না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেও দ্রুত সফর সূচি সংক্ষিপ্ত করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান দেশে ফিরে গেছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়।
মোহাম্মদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মানবাধিকার নেতা ম্যালকম এক্সের কন্যা আতাল্লাহ শাবাজ, আলীর স্ত্রী লোনি এবং কন্যারা বক্তব্য রাখেন। ১৯৬৪ সালে ইসলাম ধর্ম প্রহণ করলে নিজের নাম ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে পরিবর্তন করে মোহাম্মদ আলী হয়। কারণ ক্যাসিয়াস ক্লে নামটিকে ‘দাস নাম’ হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন দ্য গ্রেটেস্ট।
১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েট বক্সিংয়ে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে মোহাম্মদ আলী খ্যাতি অর্জন করেন। এর পরপরই পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে লড়েন আলী। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ বলে খ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা ১৯৬৪ সালে মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। প্রথম মার্কিন মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন আলী। ৬১টি মুষ্টিযুদ্ধের ৫৬টিতেই জয় পান তিনি। এর মধ্যে ৩৭টিই ছিল নকআউট। ১৯৮১ সালে অবসর নেন মোহাম্মদ আলী।
১৯৯৯ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ মোহাম্মদ আলীকে ‘স্পোর্টসম্যান অব দ্য সেঞ্চুরি’ ঘোষণা করে। একই বছর বিবিসি তাঁকে ঘোষণা করে ‘স্পোর্টস পার্সোনালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি’।
গত শুক্রবার বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ তিনবারের বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলী ৭৪ বছর বয়সে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ‘স্বাভাবিক কোনো কারণে হওয়া সেপটিক শক বা সংক্রমণজনিত মারাত্মক জটিলতায়’ মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন বলে জানায় তার পরিবার।অনেক আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন মোহাম্মদ আলী। এর মাঝেই পারকিনসন’স রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে ওঠে। শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করলে গত ২ জুন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।