চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

অমানবিক নাকি আরো কিছু?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ে যেসব শিক্ষার্থীরা হলে থেকে পড়াশুনা করেন তাদের গল্পের সঙ্গে এই গল্পটি একেবারেই মিলে যাবে। তবে যাদের মন আছে শুধু তাদের মধ্যে এই ব্যাপারটি অনুভূতি হবে। যেমনটি হয়েছে প্রবাসী শিক্ষক আমিনুল ইসলামের।

আমিনুল ইসলাম আজ তার ফেসবুকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থাকা একটি মেধাবী শিক্ষার্থীর ঝড়ে যাওয়া প্রাণ নিয়ে একটি লেখা পোস্ট করেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘ছেলের কথা বলতে গিয়ে অটোরিকশা চালক বাবা কান্নাজরিত কণ্ঠে বলেন “আমরা গরিব মানুষ। আমার সম্পদ ছিলো একটাই। সেই পোলাডাই কষ্ট পাইয়া মইরা গেলো”। ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। মাত্র এক মাস আগেই ভর্তি হয়েছিলো। বাবা অটোরিকশা চালক, ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকা সম্ভব না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠেছিলো “বড় ভাইদের” মাধ্যমে, থাকতো হলের বারান্দায়। গভীর রাতে মাঝে মাঝে যেতে হতো “মিটিং এ!”

আমিনুল ইসলাম পোস্টে বলেন, ‘আমরা যারা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, সবাই মনে হয় কম বেশি এই বিষয় গুলোর সাথে পরিচিত। হলে সিট না পেয়ে বড় ভাইদের মাধ্যমে হলে থাকা, মিটিং মিছিল করা, গণরুমে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো এই দেশে স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এই ছেলেটি মাত্রই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলো।

তীব্র শীতে হলের বারান্দায় থাকাতে তার নিউমোনিয়া এবং টাইফয়েড হয়ে গিয়েছিলো। এমন শারীরিক অবস্থার মাঝেও প্রচণ্ড শীতে তাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বড় ভাইদের “মিটিং এ!” আপনাদের যাদের টাইফয়েড সম্পর্কে ধারণা আছে-তারা হয়তো জেনে থাকবেন, শরীরের এমন অবস্থায় এক মিনিট ঠিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দায়।

আর এই ছেলে তীব্র শীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলো। শেষমেশ অবস্থা আরও খারাপ হলে সে ফরিদপুরে নিজের বাড়িতে ফেরত যায়। সেখনে গিয়েই বাবা’কে বলেছে “আমি মনে হয় আর বাঁচবো না” ফরিদপুরের ডাক্তার’রা তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বললে, তাকে ঢাকায় নিয়েও আসা হচ্ছিলো। কিন্তু পথের মাঝেই তার মৃত্যু হয়।

আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তাতে মনে হয়েছে-ছেলেটি হয়তো তার শারীরিক অবস্থার কথা বড় ভাইদের সেভাবে বলেনি। সে হয়তো ভয় পেয়েছিলো, যদি না আবার হল ছেড়ে দিতে হয়। আমি এই বড় ভাইদেরও দোষ দিবো না। এই সব ব্যাপার বাংলাদেশে স্বাভাবিক।

তবে ছেলেটি যেই হলে থাকতো, সেই হলের প্রাধ্যক্ষ্, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেন,”আমি এসব কিছুই জানি না। নিউমোনিয়া বারান্দায় থাকলেও হতে পারে, রুমে থাকলেও হতে পারে। আর বারান্দায় তো অনেকেই থাকে। তাদের তো কিছু হয়নি”

মানুষ এতোটা অমানবিক কিভাবে হয়! ছেলেটা মাত্রই মারা গেছে। এই শিক্ষক তো বলতে পারতেন খুবই খারাপ লাগছে একজন ছাত্র এভাবে মারা গেলো।

আমাদের হলে সিটের সংখ্যা অপ্রতুল, তাই অনেকে বারান্দায় থাকে। সবাই যাতে হলে ভালো ভাবে থাকতে পারে, এমন ব্যবস্থা করতে পারলে খুব ভালো হতো! এই সামান্য মানবিক কথাগুলোও এখন আর কারো মুখ থেকে বের হয় না। এখন বলা হয়-বাকীরা তো বারান্দায় থেকেও বেঁচে আছে! সে মরে গিয়েছে, তাই দোষ তারই!