মধ্যরাতে অভিভাবক ডেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রী আবার হলে ফেরত এসেছেন।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঐ তিন ছাত্রীকে তাদের অভিভাবক হল থেকে নিয়ে যায়। পরেরদিন তারা তিনজনই হলে ফেরত আসে এবং দু’জন বিকালে ঢাবি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আন্তঃহল ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান।
তবে কেন প্রায় মধ্যরাতে অভিভাবক ডেকে তাদের নিয়ে যেতে হলো এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশার।
হলের প্রাধ্যক্ষ বলছেন হলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্যই ঐ তিন ছাত্রীর অভিভাবকদের ডাকা হয়। এখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বা ছাত্রলীগের সাথে ঝামেলার কোন সম্পর্ক নাই।
অন্যদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ফেসবুকে অপপ্রচারের অভিযোগে ও ছাত্রলীগ নেত্রী ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার ঘটনার তদন্তে কবি সুফিয়া কামাল হল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরই এক পর্যায়ে রাত ১০টা থেকে ১টার মধ্যে ওই হলের তিন ছাত্রীকে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়া হয়। আরেক ছাত্রীর অভিভাবক এলেও গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে হলে রাখা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার দুপুরে কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমাদের হলে যদি মেয়েদের কোন সমস্যা হয় তাহলে আমরা প্রথমে ছাত্রীদের পরিবারের সাথে কথা বলেই সমাধানের চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে হলের অভ্যন্তরীণ একটি সমস্যা ছিল। কয়েকজন মেয়ের অভিভাবকদের ডেকেছিলাম কথা বলার জন্য। কথা বলা শেষে আমাদের কাছে লিখিত দিয়ে তারাই তাদের মেয়েদের বাসায় নিয়ে যায় কাউন্সেলিং করানোর জন্য। এখানে কোন মেয়েকে হল থেকে বের করা হয় নি। তারা তাদের অভিভাবকের সাথে বাসায় গিয়েছিল। আমরা তাদের অফিসিয়ালি কোন সতর্ক বার্তা বা শোকজ করিনি। তারা সেইরাতে নিজেদের বাড়িতে ছিল, পরেরদিন হলে ফিরেছে এবং হলের খেলাতেও অংশ নিয়েছে।
কি ধরনের সমস্যার জন্য অভিভাবকদের ডাকা হয়েছিল জানকে চাইলে তিনি বলেন, এটা একান্তই অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল, আমি চাইনা আমার মেয়েদের নিয়ে বা তাদের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার হোক।
হলের তিন শিক্ষার্থীকে কেন রাতের বেলায় অভিভাবকদের ডেকে তাদের সাথে পাঠানো হলো? জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, হলে যদি কোন সমস্যা হয় সেটা হল প্রশাসনই দেখবে
সমস্যার সমাধান করা তাদের দায়িত্ব। তাদের হয়ত কোন সমস্যা ছিল। তাই ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডেকে তাদের সাথে কথা বলে হল প্রশাসন সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা করেছে। এখানে কোনভাবেই আন্দোলনে অংশ নেয়ার বিষয়টি জড়িত নয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা হলে সুষ্ঠুভাবে থাকবে এটা আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা।
ঐ তিন ছাত্রীর মধ্যে একজনের সাথে যোগাযোগ করলেও তিনি কোন কথা বলতে রাজি হন নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুফিয়া কামাল হলের কয়েকজন ছাত্রী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, যারা সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তাদের ডেকে ডেকে ‘তদন্তের নামে হয়রানি’ করেছে হল কর্তৃপক্ষ এবং নানা ধরনের হুমকি ধামকিও দেয়া হচ্ছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কয়েকশত শিক্ষার্থী। এ সময় ‘ছাত্রী নির্যাতনের’ প্রতিবাদে প্রশাসনের জবাব চেয়ে স্লোগান দেন তারা। ‘হলে হলে নির্যাতন কেন?’, ‘নিপীড়ন রুখে দাও’সহ বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা।