অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এসব বাজারে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৫৬ কোটি ডলার। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৪৭ কোটি ডলার। এই হিসাবে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৯ কোটি ডলার বা ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যে নানা বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকায় নিয়মিত বা পুরনো বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে দেশের পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।
তবে এসব বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কিছু বাধা রয়েছে। সরকারসহ সবার সহযোগিতা পাওয়া গেলে রপ্তানি আরো বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
ইপিবির তথ্যমতে, ২০০৮ সালে নতুন বাজারে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮০ কোটি ডলার। সেই রপ্তানি বেড়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হয়েছে ৩৯০ কোটি ডলার।
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডা-এসব দেশে বাংলাদেশ নিয়মিত পোশাক রপ্তানি করে থাকে। এসব দেশের বাইরের দেশগুলোকে অপ্রচলিত বাজার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন- ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি।
পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকারের আর্থিক প্রণোদনা, উৎপাদনকারীদের নতুন নতুন বাজার খোঁজা, বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর খুচরা বিক্রি বাড়ানো ও উঠতি বাজারগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়াসহ কয়েকটি কারণে এসব বাজারে রপ্তানি বেড়েছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে চীন, জাপান ও ভারতে পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। ফলে এসব বাজারে বেশ রপ্তানি বাড়ছে।
২০০৭-২০০৮ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে আসছে।
তবে জাপানে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে খুব দ্রুত। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৪৪৬ কোটি ৯৯ লাখ। অর্থাৎ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বছর শেষে এই রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
২০১১ সালে চীনে বাংলাদেশের ৫ হাজার পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছিল দেশটি। যার অধিকাংশই হচ্ছে পোশাক খাতের।
স্থানীয় রপ্তানিকারকরা ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। যদিও কোনো কোনো পণ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের কারণে আমরা পুরনো বাজারের পাশাপাশি নতুন বাজারে স্থান করে নিচ্ছি। রাশিয়া, জাপানসহ কয়েকটি বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ছে।
তিনি বলেন, মূলত এসব বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকায় রপ্তানি বাড়ছে। তবে অপ্রচলিত এসব বাজারে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো অতিক্রম করেই আমরা বাজার বৃদ্ধি করছি। আশা করি ভবিষ্যতে বাজার সম্প্রসারণে সরকার থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
নতুন বাজারসহ সার্বিকভাবেও পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এসময় পোশাক রপ্তানি করে ৩০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারিতে ১৯ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে রপ্তানি হয়েছে ২০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তৈরি পোশাকের ওভেন খাতে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এলেও নিটওয়্যার খাতে এসেছে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।