বিশ্ব অর্থনীতিকে সংকটমুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে জাপানে শেষ হয়ে গেলো জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন । যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য,কানাডা,জার্মানি , ফ্রান্স , ইতালি , জাপান সহ অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী বিশ্বের সাতটি দেশ । ওই সম্মেলনে আমন্ত্রিত ছিলেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সম্মেলনে শেখ হাসিনা কেন আমন্ত্রিত হয়েছেন তা আশা করি যারা বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে একটু খোঁজখবর রাখেন তাদের বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় । ‘জাপান – দ্যা ইসে-শিমা সামিট’ শীর্ষক ১২২ পৃষ্ঠার বিশ্ব প্রকাশনায় যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিবন্ধ ‘ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের অন্বেষণে’ নিবন্ধটি বিশ্ব ভাবনা ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছিল তখনই বুঝা গিয়েছিল এই সম্মেলনে শেখ হাসিনার গুরুত্বের বিষয়টি। নিবন্ধটি জি-৭ এর নেতৃবৃন্দের নিজস্ব ভাবনার পরপরই শুধু নয় , প্রচ্ছদ স্টোরিতেও স্থান পেয়েছিল শেখ হাসিনার বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে ভবনার লেখাটি । এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা কেবল নেতৃত্বেই বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাতারে থাকলেন না, উন্নয়ন ভাবনা ও আদর্শেও তিনি উঠে এলেন একই উচ্চতায়।
২৭মে সকালে জাপানের উপদ্বীপ ইসে-শিমায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর স্বাস্থ্য , নারীর ক্ষমতায়ন ,টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা এবং উন্নত অবকাঠামোর গুরুত্ব নিয়ে তাঁর ভাবনাগুলো বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে তুলে ধরেন । এরপরের সবকিছুই ইতিহাস। এক অন্যরকম উচ্চতায় বাংলাদেশ । এক অন্যরকম উচ্চতায় শেখ হাসিনা । মিডিয়ার কল্যাণে হয়তো দেশবাসী অনুষ্ঠানের পরিশীলিত একটি রূপ দেখতে পেয়েছেন। কিছু ভিডিও ফুটেজ , বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে কিছু ছবি দেখতে পেয়েছেন । কিন্তু এর বাইরে পরিবেশ’টা ছিল একেবারেই অন্যরকম । যার সবকিছুই বাংলাদেশের জন্য মর্যাদার, বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য সম্মানের।
দেশবাসী দেখতে পাননি , পাশেই বসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা কিভাবে শেখ হাসিনাকে তাঁর নেতৃত্বের জন্য কত প্রশংসা করেছেন এবং একটু পরপর মাথা কাত করে নিজ থেকেই কথা বলছিলেন । দূর থেকে ওবামা’র অভিব্যক্তি দেখে মনেই হচ্ছিলো পুরো অনুষ্ঠানের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু মনে হয় শেখ হাসিনা । নিজের আসন থেকে উঠে আসলেন কানাডার প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডো, সরাসরি চলে গেলেন শেখ হাসিনার আসনের পিছনে । বঙ্গবন্ধু কন্যার দৃষ্টি আকর্ষণ করে পিছনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েই কথা বললেন ট্রুডো । দূর থেকে কথাগুলো শোনা না গেলেও , চেহারা দেখেই তাঁর আন্তরিকতার মাত্রাটা খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছিল । জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল অনেকটুকু এগিয়ে এসেই বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে কুশল বিনিময় করলেন । অনেকক্ষণই কথা বললেন তারা । যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বার বারই কথা বলছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ।
এই কথাগুলো কেন বললাম তাঁর অবশ্য কারণও আছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা ছিলাম জাপানের নাগয়া সিটির হিলটন হোটেলে । আমার একটা মজ্জাগত অভ্যাস হচ্ছে নতুন কোন জায়গায় গেলে নতুন নতুন লোকজনের সাথে পরিচিত হওয়া । সেখানেও বেশ কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয় । যারা ছিলেন পর্যটক , যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা । কথাবার্তার এক পর্যায়ে আমাদের জাপান যাবার হেতু জানতে চাইলো । যাদের সঙ্গে পরিচিত হলাম এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশকে চিনেনই না , মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় তাও তারা জানেন না । সেটা হয়তো তাদের দোষ না । আমরা বিশ্ববাসীর সবার কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করাতে পারিনি । একবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেছিলেন । যে পরিচয়টি ছিল বীর বাঙ্গালীর শৌর্য সাহসের ইতিহাস । আর সেই বীর বাঙ্গালিকে এখন মর্যাদার আসনে নিয়ে যাবার কাজটি করছেন তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা । যা এইবারের জি – ৭ সম্মেলনেও বিশ্ব মোড়লদের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়েছে ।
যে সম্মান তাঁরা শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন তা এই দেশের জনগনেরই সম্মান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিকসহ বিভিন্নখাতে উন্নয়নই শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর কাছে এই মর্যাদার আসনে বসিয়েছে । একজন যথাযথই বলেছেন , শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে খুব শিগগিরই এই জি-৭ হবে জি-৮ সম্মেলন । যেখানে অন্তর্ভুক্ত হবে আরেকটি নাম বাংলাদেশ ।
বাংলাদেশের যে উন্নয়ন বিশ্বমোড়লরা দেখতে পাচ্ছেন , তারা সেই সম্মানও দেখাচ্ছেন । জাতি সংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পুরস্কারও পাচ্ছেন শেখ হাসিনা । শুধু বুঝলোনা আমাদের দেশের নামধারী তথাকথিত কিছু সুশীল। বিএনপি- জামাত স্টাইলে তাঁরা শেখ হাসিনা বিরোধী কথাবার্তা বলেই যাচ্ছেন । যাই হোক , এরপরও নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ । শেখ হাসিনার স্বপ্ন , ভিশন ২০২১ এর আগেই বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ আর ২০৪১ সালের মধ্যে হবে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত বাংলাদেশ ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল
আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)