বিশ্বকে শুধু সস্তা শ্রম সরবরাহ না করে উদ্ভাবনী ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সেবা দেবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ। এজন্য সরকার প্রযুক্তি দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানের অন্যতম পরিকল্পনাকারী জয় বলেন: আগামী প্রজন্ম গার্মেন্টসে পোশাক সেলাই করবে না বরং সেলাই করতে বসানো রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি আসর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের দ্বিতীয় দিনে ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলুশন নিয়ে আলোচনায় কি-নোট স্পিকারের বক্তব্যে এসব সম্ভাবনার কথা বলেন জয়।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন: শুধু প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন নয়, বিশ্বকে প্রযুক্তি সেবা দেবে বাংলাদেশ, এটা আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ হবে বিশ্বের অন্যতম ডিজিটাল হাব। বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে কেউ সেবা চাইলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল-ছোট্ট শহরের এক কোণ থেকে সেই সেবা দেবে আমাদেরই কোন এক ফ্রিল্যান্সার।

তার আশা, দেশ রোবোটিক্সে এগিয়ে যাবে। অনলাইনে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে দেশ-সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যাবে ইন্ডাস্ট্রি। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবট প্রযুক্তি জয়জয়কারের সময়ে মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে এমন আলোচনাকে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে।
তিনি বলেন: কর্মসংস্থানের অভাব হবে না। প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ মানবসম্পদ হলে কাউকে গার্মেন্টসে কাজ করতে হবে না। নিজে সেলাই করার বদলে রোবট দিয়ে সেলাই পরিচালনা করতে পারবে। কাজ সহজ হবে। বাস্তবতা হচ্ছে যতোই সব কিছু অটোমেটিক হোক না কেন, ইন্ডাস্ট্রিকে চালাতে মানুষ লাগবেই।বক্তব্যে ২০০৮ সালের পর থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ চলায় প্রাপ্তিগুলো জানিয়ে তিনি বলেন: বর্তমানে সরকারের ৪০ শতাংশ সেবা অনলাইনে দেয়া যাচ্ছে। আগামীতে ৮০ শতাংশ সরকারি সেবা দেয়া হবে অনলাইনে। এখন ৫০ শতাংশ মানুষ অনলাইনের আওতায়, যা ২০০৮ সালে ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। প্রায় তিন কোটি মানুষ এখন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে।
ডিজিটাল অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে সেই সম্পর্কে ধারণা দেন জয়। তিনি বলেন: আগামীর বাংলাদেশে নাগরিকের প্রয়োজনীয় সব থাকবে হাতের মুঠোয়, স্মার্টফোনে। ঢাকার অরাজক ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃংখলা আনতে চালকবিহীন গাড়ি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় স্বয়ংক্রিয় আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে পথে চলতে এই গাড়ির কোন ট্রাফিক পুলিশ, সিগনাল বাতি লাগবে না।
‘ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার গতি পাবে ঢাকার রাস্তা। সোফিয়ার মতো রোবট আসবে দেশে, ইতোমধ্যে দেশের রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করেছে রোবট। স্মার্টফোনে যোগাযোগ করা যাবে মানুষের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের সঙ্গে, রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হবে জেনেটিক এডিটিং।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মানুষ এবং মেশিনের সমন্বয়ে বাংলাদেশকে উন্নত করার পথ দেখাতে সরকার কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানান জয়।
‘মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স’ নামের এই বিশেষ আয়োজনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডিজিটাল বাংলাদেশের আদ্যপান্ত সংক্ষেপে জানান।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কঙ্গোর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা ডাইডোন কালোম্বো এনকিলে, কম্বোডিয়ার ডাক ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী কান চানমেটা দেন, ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী দীন নাথ দুঙ্গায়েল, মালদ্বীপের সশস্ত্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপমন্ত্রী তারিক আলী লুথুফি, ফিলিপিন্সের আইসিটি অধিদপ্তরের পরিচালক নেস্টর এস বোঙ্গাটা প্রমুখ।