মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর নির্মম নির্যাতনের জন্য দেশটির সামরিক নেতৃত্বকে যুক্তরাষ্ট্র দোষী মনে করে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। তবে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করার জন্য ওই সেনাবাহিনীর প্রধানদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, এ সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি।
‘পুরো বিশ্ব তো আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু অলসভাবে ওই অঞ্চলে (রাখাইন) চলমান নৃশংসতা দেখতে পারে না,’ ওয়াশিংটনে আয়োজিত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর অনুষ্ঠানে বলেন টিলারসন।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩জন আইনপ্রণেতা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি জোরালো অনুরোধ জানিয়েছেন যেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধানদের যুক্তরাষ্ট্র সফরের ওপর আগে থাকা নিষেধাজ্ঞাটি আবারও আরোপ করা হয় এবং একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার পেছনে দায়ীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অবরোধ আরোপের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
মার্কিন পার্লামেন্টের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ওই ৪৩ সদস্যের পক্ষ থেকে টিলারসনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়: অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কী কী ঘটছে, সে বিষয়ে সত্য স্বীকার করতে রাজি না।
চিঠিতে রাখাইনে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ‘অর্থবহ পদক্ষেপ’ নিতে ওয়াশিংটনকে আহ্বান জানানো হয়।
আল-জাজিরা জানায়, এই চিঠির জবাবেই টিলারসন ওই অনুষ্ঠানে বলেন, মার্কিন সরকার বুঝতে পারছে যে, মিয়ানমারে জঙ্গিবাদ সমস্যা রয়েছে। কিন্তু এর মোকাবিলা করার জন্য সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সুশৃঙ্খল ও সংযতভাবে কাজ করতে হবে এবং ওই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে যেন বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের জবাবদিহিতা সবার কাছে স্বচ্ছ ও স্পষ্ট হয়।
‘যদি খবরগুলো সত্যি হয়, কাউকে না কাউকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং এটা বার্মার সামরিক নেতাদের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে, তারা বার্মার ভবিষ্যৎ কোনদিকে নিয়ে যেতে চান’ বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।