
হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে তাঁর পথচলা বহু বছরের। হুমায়ূনের অসংখ্য নাটক, চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় করাদের একজন ডা. এজাজ। সম্প্রতি তিনি এসেছিলেন চ্যানেল আই ভবনে। কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে। বেশীর ভাগ কথায় হয়েছে নির্মাণের কারিগর হুমায়ূন আহমেদেকে নিয়ে-
হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন নির্মাণে তাঁকে পাওয়া গেছে বিভিন্ন চরিত্রে। তবে, তারও আগে থেকেই তিনি রেডিও ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত অভিনেতা ডা. এজাজ। হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছিলেন ‘সবুজ সাথী’ নাটকে, স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মী হিসেবে ছোট একটি চরিত্রে। এরপর থেকেই হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সব নির্মাণেই ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। প্রথম দিকে সিরিয়াস চরিত্রে অভিনয় করলেও পরবর্তীতে মজার চরিত্রগুলোতে স্থান পান ডা. এজাজ।
তবে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় আরও আগে থেকেই। নিজের সরাসরি শিক্ষকের বন্ধু বলে হুমায়ূন আহমেদকে সবসময় ‘স্যার’ বলেই সম্বোধন করে গেছেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে অভিজ্ঞতার ফলে ডা. এজাজের ভান্ডারে আছে তাঁকে নিয়ে হাজারো গল্প।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফিরে গেলেন নুহাশপল্লী তৈরিরও আগের সময়ে। সেবার নুহাশ পল্লীর জন্য জায়গা দেখতে গিয়ে এক রিকশায় হুমায়ূন আহমেদের সাথে গ্রামের রাস্তায় চলার কথা আজও ভোলেননি তিনি। সেদিনই প্রথম জেনেছেন বৃষ্টিতে ভিজতে কতটা পছন্দ করতেন হুমায়ূন! গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রিয় লেখকের জন্য খাবার আয়োজন করে ফেলেছিলেন নিমিষেই। খাবার তালিকায় ইলিশ মাছ দেখে সেদিন দারুণ খুশি হয়েছিলেন হুমায়ূন।

ডা. এজাজ বললেন, হুমায়ূন আহমেদকে খুশি করা খুব সহজ ছিল। শুটিং চলাকালীন বা শুটিং শেষে একই রকম মানুষ ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সবসময় সবার খেয়াল রাখতেন। প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে প্রত্যেকে যেন একই রকম যত্ন পান সে ব্যাপারে তাঁর ছিল জোরালো নজর।
বিজ্ঞাপন
ডা. এজাজের ভাষায় হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় ছিল মিথ্যা কথা। তাই সবসময় কাছের সবাই চেষ্টা করতেন হুমায়ূন আহমেদকে একটি শব্দ মিথ্যাও না বলতে। নাটক বা চলচ্চিত্র নির্মাণের সময় প্রায়ই তাৎক্ষণিকভাবে সংলাপ যোগ করতেন হুমায়ূন। কোন কোন সময় এমনও গেছে যে সংলাপ বলার সময় একত্রে পুরো শুটিং ইউনিট হাসছে।
ডা. এজাজ পেশায় চিকিৎসক বলে হুমায়ূন আহমেদ শুটিংয়ের সময় তাঁর সময়সূচিকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। খেয়াল রেখেছেন নাটক করতে গিয়ে যেন কোন রোগীর ক্ষতি না হয়। আর সে কারণেই সমান তালে রোগীদের চিকিৎসার সাথে সাথেই অভিনয় চালিয়ে যেতে কষ্ট হয়নি তার।
শুধু অভিনয়শিল্পী হিসেবে নয়, নির্মাণের নানা কাজেও এজাজ ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের নির্ভরতার নাম। শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রের শুটিং এর ব্যবস্থা করতে তিনি আবিষ্কার করেন, হুমায়ূন আহমেদের ঠিক করা লোকেশনে গিয়ে শুটিং সম্ভব না। কিন্তু প্রিয় ‘স্যার’কে এই সংবাদ জানিয়ে দুশ্চিন্তায় না ফেলে মুহূর্তের মধ্যেই ঠিক করে ফেলেছিলেন শুটিং এর অন্য জায়গা। তাঁর এই কাজে প্রথমে প্রচণ্ড অবাক হয়ে গেলেও হুমায়ূন নিজেকে সামলে বাহবা দিয়েছিলেন ডা. এজাজকে। আজও হুমায়ূন আহমেদের ‘গুড জব ডাক্তার’ বলে হাত বাড়িয়ে দেয়ার স্মৃতি অকপটে মনে করতে পারেন তিনি।
হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় এতগুলো কাজের পর কোন কাজটি তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এজাজ বললেন, আলাদা করে কোনটির নাম বলা সম্ভব নয়। প্রতিটি কাজ ছিল ইউনিটের সবার কাছে ঈদের মত আনন্দের।
প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে হুমায়ূন আহমেদকে মিস করেন ডা. এজাজ। তাঁর মৃত্যুর পর আরও নানা নির্মাতার কাজ করেছেন, এখনও করছেন। ব্যস্ততা আছে তাঁর চিকিৎসা কর্ম নিয়েও, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তিনি । বললেন, যত কাজই করা হোক না কেন, যত ভালো কাজই হোক, হুমায়ূন আহমেদকে তিনি খুঁজে বেড়ান। হুমায়ুনের মৃত্যুর পর বিষণ্ণতা থেকেই তাঁর জন্মদিনেও অন্য সবার মতো আনন্দ করতে পারেন না ডা. এজাজ। প্রিয় স্যারের অনুপস্থিতি তিনি মানতে পারেন না।
মৃত পিতার জন্মদিনে সন্তানের উচ্ছ্বাস মানায় না বলেই মন্তব্য করেলেন ডা. এজাজ। হুমায়ূন আহমেদকে নিজের বাবা বলেই মানেন গরীবের ডাক্তার খ্যাত এই চিকিৎসক ও অভিনেতা। পিতৃতুল্য হুমায়ূনকে ঘিরে থাকা কোন উৎসবে পরোক্ষভাবে সামিল থাকলেও মনের ভেতরের বেদনাটা প্রকাশ পেয়ে যায় বারবার ডা. এজাজের।
ছবি: জাকির সবুজ
বিজ্ঞাপন