চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

ভারাক্রান্ত হৃদয়ের ঈদ

আগামীকাল ঈদ। ঈদ অর্থ খুশি। ধনী-গরীব, আর্ত-পীড়িত সকল মানুষের জন্য ঈদ বয়ে আনে এক অনাবিল আনন্দ। রোজার শুরুতেই মানুষের কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। চলে আত্মীয়-বন্ধুর মাঝে উপহার দেয়া-নেয়া। এক সময় শিশু-কিশোরদের মাঝে ভিউ কার্ড উপহার দেয়ার একটা সুন্দর প্রচলন ছিল। আগের দিনে শিশুদের পাঠ্য বইয়ে একটা অধ্যায় থাকত ‘আজ ঈদ, নতুন জামা পরিব, সেমাই খাইব, ঈদগাহে যাইব, কোলাকুলি করিব’,– এই জাতীয়। তখনকার যুগে গৃহবন্দী বধু ঈদে বাপের বাড়ি যাওয়ার একটা প্রচলন ছিল। অক্ষম কৃষকও কষ্ট করে মেয়ের জামাইয়ের জন্য একটা পাঞ্জাবি অথবা লুঙ্গির ব্যবস্থা করত।

শিল্পায়ন-শহরায়নের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে এদেশের মানুষের জীবনমান অনেকটাই বদলে গেছে। ঈদের আনন্দও মানুষের কাছে আরো বেশি উৎসব মুখর হয়ে উঠছে দিন দিন। ঈদের ছুটিতে কর্মমুখী মানুষ আপনজনের কাছে ছুটে যায়। যাকে বলে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা। ছোট-ছোট ছেলে মেয়েরা পথ চেয়ে থাকে উপার্জনকারী বড়ভাই অথবা বোন তাদের জন্য জামা-কাপড়সহ নানান আবদার মিটাতে বাড়ি আসবে। মা-বাবা পথের দিকে চেয়ে থাকেন কখন সন্তানের মুখটি দেখবেন।

ঈদের জলস্থল পথে লোকে লোকারণ্য। বাস, লঞ্চ, স্টিমারে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। স্বাচ্ছন্দপূর্ণ ভ্রমণের জন্য কিছু লোকজনের যাতায়াত বিমানে চলে। ঈদের ছুটিতে শহরে গ্রামে প্রতিটা পরিবারেই চলে উপহার বিনিময়ের পাশাপাশি দাওয়াত খাওয়ার ধুম।

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা তৃতীয়। মুসলমানরা রমজান মাস জুড়ে রোজা পালনের পাশাপাশি তারাবির নামাজ আদায় এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহিমান্বিত লাইলাতুল কদরের রাত্রি মসজিদে বসে ইবাদত এ থাকতে বেশি আগ্রহী। কেউ কেউ নাজাতের দশ দিন মসজিদে ইতেকাফে বসেন। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে মানুষরা ফিতরা এবং যাকাত প্রদান করে থাকেন। ঈদের নামাযের পূর্বেই ফিতরা আদায় করা মুস্তাহাব। যাকাত ধনী গরিবের সেতুবন্ধ। ধনী প্রদানকৃত অর্থ গরিবের প্রাপ্য হক। যাকাত আদায় করা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। নেক কাজে দেরি করা ঠিক নয়। কারণ হঠাৎ মৃত্যু হলে যাকাত প্রদানকারীর দায়বদ্ধতা থেকে যাবে। বছরান্তে একবার যাকাত আদায় করা ফরজ। ধনবান হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই যাকাতের ব্যাপারে উদাসীন। বিশেষ করে কৃপণ ব্যক্তির পক্ষে যাকাত প্রধানে মানসিক চাপ এবং অনিচ্ছা জাগ্রত হয়। প্রকৃত যাকাত দাতা ও গ্রহীতার মাঝে সত্যিই এক মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

প্রসঙ্গতই নিজের অভিজ্ঞতা খানিকটা উল্লেখ করছি: নাকিব কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার সময় ভোরবেলা (মামার ভোরে বাজারে যাওয়া আজীবনের অভ্যাস) আম্মা কয়েক কদম আমার সাথে আসতেন। কোনদিন মামার সাথে হেঁটে হেঁটে যেতাম; আবার কোন কোন দিন রঞ্জু অথবা বাসাদের রিকশায় যেতাম। ওদের সাথে কথোপকথন- বাসাদকে বললাম, তুই নাকি বউ মারা যাওয়ার ত্রিশ দিনও পার না করে আবার বিয়ে করে ফেলেছিস? সে রেগে যেয়ে উত্তর দেয়, কেডা কইছে এই কথা, আমি চল্লিশ দিন পার কইরা পরে বিয়া করছি, নতুন বউ এর নামডা (যাকাতের কাপড়ের লিস্টে) তুইললেন যে।

রঞ্জু এবং তার বউ দুইজনেই কর্মঠ পরিবারটি ওরা কারো দান গ্রহণ করে না। রঞ্জুর সাথে কথোপকথন- আফা আপনে মাস্টারনী মানুষ, কত হাজার টাকা বেতন পাইন? আমি আর রঞ্জুকে বলতে পারি নাই যে জীবনের প্রথম শিক্ষকতায় নতুন স্কুল থেকে কয়শো টাকা সম্মানী পাই।

যাই হোক, যাকাত প্রদানকারী হলেন আমার বড় বোন। তবে যাকাতের বস্ত্রগুলো আমার হাত দিয়েই সরবরাহ করতাম। সেই সুখময় দিনগুলি জীবনে ভোলার মত নয়। সারা পৃথিবী জুড়ে সকল মুসলমানের এই যে এত আয়োজন এত আনন্দ সবই আজ সীমিত। সবই যেন স্থবির করে দিল করোনাভাইরাস নামক জীবাণু। প্রায় তিন মাস হতে চলে মানুষের ভয় আতঙ্ক আর জীবনের অনিরাপত্তায়। আপন জনের সাথে নেই কোন দেখা সাক্ষাৎ। ঈদে রাস্তায় নেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়, নেই সন্তান বাড়ি ফিরার আশায় মায়ের মেঠো পথের দিকে তাকিয়ে থাকা, প্রিয় মানুষটি উপহার নিয়ে বাড়ি আসবে, প্রহর কাটার তাড়া নেই পল্লী বন্ধুর। ফিতরা ও যাকাত প্রদানকারী গ্রহীতার হাতে তুলে দিতে পারছেন না যেখানে এক মধুর ভাবাবেগ সৃষ্টি হয়।

করোনায় আপনজনের বিয়োগ ব্যথায় কতগুলো পরিবার আজ বেদনায় সিক্ত। দেশ ও জাতি হারিয়েছে মহৎপ্রাণ ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিক। এরই মাঝে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চলে গেলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার। এই মহৎ প্রাণ ব্যক্তিরা তাদের সৎ কর্মের জন্য মরে যেয়েও তাঁরা অমর হয়ে থাকবেন দেশ ও জাতির নিকট। ভেতরটা হু- হু করে উঠে টেলিভিশনে যখন সীমিতভাবে বাজানো হয়- ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে, এলো খুশির ঈদ।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View