ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চূড়ান্ত জানিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, `আশা করছি সামনের অধিবেশনে এই আইন পাশ হবে।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তায় মেয়েদের সচেতনতা’ কর্মশালার উদ্বোধনে এসে এ কথা জানান তিনি। এ বছর ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। তারপর থেকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে পাস হওয়ার পথে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
নতুন আইনটির খসড়া প্রকাশের পরই ৩২ ধারার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছিল। আগের তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ভুক্তভোগী ও সাংবাদিকদের ধারণা, নতুন আইনের ৩২ ধারা গুপ্তচরবৃত্তি রোধে করার কথা বলা হলেও ৫৭ ধারার মতো ৩২ ধারা সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশে বাধার দেয়াল হবে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার বিষয়ক নানা প্রতিষ্ঠান ৩২ ধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করে।
তবে গত ৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদে আইনটি উত্থাপনের পর দেখা যায়, তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি-বিষয়ক ৩২ ধারার মতো আরও কঠিন একটি ধারা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিলটিতে আপত্তি জানায়। পরে বিলটি চার সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
আইনটি পাস করার আগে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৯, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা সেগুলো বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। আইনটি পাশ হবার আগে আগামী ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সম্পাদকদের আবারও আমন্ত্রণ জানানো হবে, সেখানে তাদের দাবিগুলোও তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

আইন করা হয় নির্দিষ্ট কোনো পরিস্থিতি ও সমস্যা মোকাবিলা করতে। কিন্তু কোনো আইন যদি হয় স্বাধীন মত প্রকাশের বাধা এবং অবাধ তথ্য প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা, তা অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনুচিত। আমাদের আশাবাদ, সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একটি যুগোপযোগী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি হবে, যা দেশের জনগণের ডিজাটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।