চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

“চুড়ি অথবা চেয়ারের গল্প” মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ’র এক জীবন্ত উপন্যাস

বই পর্যালোচনা

লেখক যখন সাংবাদিক আর গল্পের নায়কের পেশাও যখন সাংবাদিকতা। তখন লেখাতে লেখকের লেখনি হয়ে ওঠে জীবন্ত।

”চুড়ি অথবা চেয়ারের গল্প” গ্রন্থটিতে দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে একজন তরুণ সাংবাদিক ওসমানকে। যার চারপাশে গল্পের আবর্তে চমৎকারভাবে ঘূর্ণায়মান হয়েছে নূপুর , শিউলী এবং দীনা নামের তিনটি চরিত্র।

লেখক ‘চুড়ি’ দ্বারা বুঝিয়েছেন মানব জীবনের কোমল অধ্যায় তথা প্রেম, সংসার ইত্যাদিকে। চেয়ার দ্বারা বুঝিয়েছেন ক্ষমতা, কর্পোরেট পলিটিক্স ।

নবাগত সুন্দরী চিত্রনায়িকা নূপুরের সাক্ষাৎকার দিয়ে শুরু হওয়া উপন্যাসটি অসংখ্য ভাবনার দেয়াল বেয়ে ছুটে চলেছে নাটকীয় চিত্রকল্পে। সততা নিষ্ঠা এবং পেশাগত দক্ষতার কারণে ওসমানকে পড়তে হয় বস মাসুদ হেলালের রোষানলে। কেননা তিনি বুঝতে পারতেন এই তরুণ নিজেকে সঠিকভাবে মেলে ধরতে পারলে একদিন তার চেয়ারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সেকারণে চাকরি থেকে বাদ দেবার নানান পরিকল্পনা করলেও সেসব ফাঁদে থেকে বেঁচে যায় তরুণ সাংবাদিক ওসমান।

গল্পের নূপুর নামক চরিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চলচ্চিত্রে পরিচালক প্রযোজকদের কাছে নারীদের অসহায় আত্মসমর্পণের চিত্র। যদিও নবাগত এই নায়িকা ভালোবাসতে শুরু করে সাংবাদিক ওসমানকে আর ওসমান শিউলীকে। যার সাথে পরিচয় হয় তার লেখা নাটক প্রদর্শনের সময়। দুজনের সম্পর্ক ভালোবাসায় রূপ নেয়। শিউলীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে গেলে পাশে দাঁড়ায় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দীনা।

অন্যদিকে পরিচালনা পর্ষদের কাছে ওসমানকে অদক্ষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মাসুদ হেলাল। ঘটনা হিতে বিপরীত হতে থাকে। ম্যানেজমেন্ট এর কাছে ওসমানের পেশাগত দক্ষতা প্রশংসিত হয় ফলত তিরস্কার নয় বরং পুরস্কৃত হয় ওসমান। বস মাসুদ হেলাল আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠে এবং এক পর্যায়ে সফলও হয় সে। কলঙ্ক গায়ে মেখে অনানুষ্ঠানিকভাবে চাকরি ছেড়ে দেয় ওসমান।

মনের সব দুঃখ যন্ত্রণার কথা শেয়ার করতে থাকে একমাত্র বন্ধু কামালের সাথে। স্বপ্নবাজ এই তরুণের অদম্য ইচ্ছে ঢাকা শহরের পাগলদের নিয়ে একটি চমৎকার ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করা। তার ধরনা স্বল্প দৈর্ঘ্যের এই মুভিটি তৈরি করা মাত্রই অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতে নিবে। সদ্য চাকরি হারানো বন্ধু ওসমানের নতুন কর্মস্থল হয় বন্ধু কামালের নির্মিত মুভির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে। একদিন কামালের অর্ধসমাপ্ত প্রজেক্টও মুখ থুবড়ে পড়ে মাসুদ হেলালের ষড়যন্ত্রে। চোখে অন্ধকার দেখে কামাল ও ওসমান। চলতে থাকে হুইস্কি থেকে গাঁজার নেশায় কাল্পনিক রাজত্ব। ওসমান চাকরি, প্রেম ভালোবাসা সব হারিয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও নেশায় দীক্ষা নেয় বন্ধু কামালের কাছে। নেশার ঘোরেই মাসুদ হেলালের সব অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে কামাল।

শেষ পরিণতিতে দীনা এবং ওসমানের একাত্মতার স্বপ্নে ওঠে আসে নানান বিপত্তি। পাগল হয়ে যায় পাগলদের নিয়ে ডকুমেন্টারি করবার স্বপ্নবান যুবক কামাল। লাম্পট্য আর কর্ম অনিষ্ঠার কারণে চাকরীচ্যুত হয় মাসুদ হেলাল। নাটকীয়ভাবে হেলালের বড় দায়িত্ব ফিরে আসে ওসমানের কাছে।

‘চুড়ি অথবা চেয়ারের গল্প’ লেখক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহর চতুর্থ গ্রন্থ হলেও প্রথম উপন্যাস। পড়তে গিয়ে কখনো মনে হয়নি এটি লেখকের প্রথম উপন্যাস। প্রতিটি চরিত্র এত প্রাণবন্ত এত জীবন্ত যে মনে হয়েছে উপন্যাসের সাথে আসাদের চলাফেরা যেন বহুকালের। তরুণ আসাদ যেন পাকা হাতে একেকটা চরিত্র ও বর্ণনার বুনন গেঁথেছেন। আর তাই মাসুদ হেলালের কুট বুদ্ধিতে যেমন মেজাজ গরম হয়েছে, টিনা নামক ছোট্ট একটা চরিত্রে প্রতি অসম্ভব ভালোবাসায় চোখ ভিজেছে। আবার কামালের নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দেখে, বন্ধুর কষ্টে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া দেখে অসম্ভব মায় জন্মেছে। ফিক করে হাসতে হয়েছে কামালের সব উদ্ভট কর্মকাণ্ডে।

বইয়ে আসাদুল্লাহ কিছু বাণী লিখেছেন, যা সবার ব্যক্তি জীবনের নির্যাস বলে আমার মনে হয়েছে। যা পড়ে মনে হয়েছে চুড়ি অথবা চেয়ারের গল্প একটি জীবন্ত উপন্যাস। বাংলা সাহিত্য থেকে উপন্যাসটি কোনোদিন হারাবে না; হারাবে না উপন্যাসের লেখকও।

সবমিলিয়ে টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এই গল্পের সাথে পরিচিত হতে চাইলে পড়তে হবে তরুণ কথাশিল্পী মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহর “চুড়ি অথবা চেয়ারের গল্প “। গল্পে অনেক জায়গায় হয়তো নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে এই তরুণ কথাসাহিত্যিক। পরিচিত জনদের কাছে এই সদাহাস্যজ্জ্বল এই বিনয়ী তরুণকেও নতুনভাবে আবিষ্কার করার সুযোগ রয়েছে।

রিভিউ লিখেছেন: কথাসাহিত্যিক আরমানউজ্জামান
বইটি প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স
বইমেলা স্টল নং ৪৫২-৪৫৩।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View