‘ট্রিট্রিলজি অব ফোলেট’ বা ‘টফ’ নামে হার্টের জটিল সমস্যায় আক্রান্ত এক তরুণ ল্যাব এইড হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারে নতুন জীবন পেয়েছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, পাঁচ-ছয় বছর বয়সে ‘ব্লু বেবি’ খ্যাত ‘টফ’ আক্রান্ত শিশুর অস্ত্রোপচার জরুরি হলেও পঁচিশ বছর বয়সে সফল অস্ত্রোপচার এদেশে এক নতুন দৃষ্টান্ত।
পঁচিশ বছর বয়সের তরুণ আল আমিন ল্যাব এইড হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ডা. লুৎফর রহমানের চিকিৎসায় এখন নতুন জীবন লাভ করেছেন। ‘ট্রিট্রিলজি অব ফোলেট’-বা ‘টফ’ নামের জটিল হার্টের রোগী তিনি যৌবনেই বার্ধক্যের দশায় ভুগেছেন। জন্মগত ভাবে হার্টের ত্রুটির শিকার আল-আমিন শিশু-শৈশব-বা যৌবনের তারুণ্যের স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পান নি।
আল আমিন বলেন, অল্পতেই হয়রান হয়ে যেতাম। দৌড়াদৌড়ি করতে পারতাম না, খেলাধুলা করতে পারতাম না।
আল আমিনের মা কমলা বেগম বলেন, “যার কাছে নিয়েছি সেই ফিরিয়ে দিয়েছে। বলেছে জটিল অপারেশন। আমি করতে পারবো না। তার পর লুৎফর রহমান সাহেবরে পেয়ে আমার ছেলের অপারেশনটা সফল হয়েছে। এতেই আমি অনেক খুশি।”
২০০১ সালে প্রথম আল আমিনের হার্টের সমস্যা চিহ্নিত হলেও অর্থ সংকটে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ হয়নি। পরবর্তীতে বেশি বয়সে অস্ত্রোপচারের সাহস পান নি চিকিৎসকরা।
আল আমিনের মামি নাসরিন হক বলেন, “উনার সাথে আলাপ করার পর উনি বললো যে অসম্ভব না তবে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিটা আমাদের নিতেই হতো, না হলে ও হয়তো বেঁচে থাকতো না।”
চিকিৎসকরা বলছেন, টফ আক্রান্তদের ফুসফুস ও ভাল্বে ছিদ্র, সরু রক্ত নালিসহ চার ধরনের জটিলতা থাকে। হার্টে স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়াতে তীব্র শ্বাসকষ্টেও ভোগে। ফুসফুসে অক্সিজেন স্বল্পতায় শরীর-হাত-নখ নীল বর্ণ ধারণ করে। ‘ব্লু বেবি’ নামে পরিচিত ‘টফ’ শিশুর শারীরিক ও মনস্তাত্বিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়।
ল্যাব এইড হাসপাতালের চিফ কার্ডিয়াক সার্জন ডা. লুৎফর রহমান বলেন, “যদি দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং চেষ্টা থাকে তাহলে সবকিছুতে সফলতা সম্বব। এই বিশ্বাস নিয়েই আমি এগিয়েছি।
আল আমিন এখন সক্রিয় জীবন উপভোগ করতে পারবে জানিয়ে ডা. লুৎফর বলেন, যেহেতু রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা ছিলো, নীল ছিলো এখন সেই সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে । তার হার্ট একদম এখন নতুন হয়ে গেছে।
বিবি জয়নব নামে আরেক গৃহিনী ৩৫ বছর বয়সে এসে হার্টের ছিদ্রের মেরামতে অস্ত্রোপচারে নতুন জীবন পেয়েছেন। জয়নব বলেন, ডা. লুৎফর বলেছেন যে তোমার হার্টে সামান্য একটা ছিদ্র পাওয়া গেছে।
জয়নবের চিকিৎসায় অনেক দেরি হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করে ডা. লুৎফর রহমান বলেন, বিদেশে, উন্নত দেশে সবাই স্কুলে যাওয়ার আগে সমস্ত জন্মগত ত্রুটি ঠিক হয়ে যায়। আমাদের দেশ কতো পিছিয়ে আছে যে সে ৩৫ বছরে জানতো না তার হার্টে ত্রুটি রয়েছে।”
চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভাঅবস্থায় শিশুর জন্মগত ত্রুটি নির্ণয়ে গাইনি চিকিৎসকরা ভূমিকা রাখতে পারেন। গর্ভ অবস্থায় বা জন্মের আগে-পরে শিশুর জন্মগত সমস্যা চিহ্নিত করে শিশুর জীবন নিরাপদ করা সম্ভব।