ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতি মুজিব বর্ষকে ব্যর্থ করা হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ থেকে মুজিব বর্ষকে সার্থক করে তোলার আহ্বান জানিয়েছে প্রজন্মের চেতনা নামে আত্মদায়বদ্ধ সামাজিক সংগঠন।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছাত্র-যুবকদের সমন্বয়ে প্রজন্মের চেতনার আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ ও গ্রহণযোগ্যতার লক্ষ্যে ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাসহ ভোটকেন্দ্রে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিচারে ব্যবস্থা এবং প্রশাসনকে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার হতে না দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন ধার্য করেছিলেন নির্বাচন কমিশন। অথচ ওই দিনটিতে সনাতন ধর্মালম্বীদের পূজা থাকায় শুরু হয় বিতর্ক। সরকার ও কমিশন প্রথমে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব না দিলেও পরে তারিখ পরিবর্তনে বাধ্য হয়। এমনকি প্রতিক বরাদ্দের পর থেকেই অনেক প্রার্থী রিটার্নিং কর্মকর্তার দফতরে একের পর এক আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং একপক্ষ আরেক পক্ষকে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাসহ হামলার ঘটনার সুস্পষ্ট অভিযোগ দাখিল করলেও, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আজও তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি হাইকোর্ট কর্তৃক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় লেমিনেটেড পোস্টার ছাপা ও প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরেও লেমিনেটেড পোস্টার অপসারণ করা হয়নি! উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে সর্বদা কমিশন নির্বিকার থেকেছেন। অথচ বিশেষ কোনো প্রার্থীকে সুবিধা প্রদানসহ বিজয়ী করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। তাদের উচিত সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জনআকাঙ্ক্ষাখাকে সম্মান দেখানো।
বক্তারা আরো বলেন, জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন কাম্য নয়। ইভিএম ভোট দেওয়া নিয়ে যেমন জনমনে শঙ্কা আছে, তেমনি ভোটাররাও ভোটাধিকার প্রয়োগ করা নিয়ে উদ্বেগ আর উৎণ্ঠায় আছে। তাই ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সকল কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কোনোরূপ ভোট জালিয়াতি, ভোট কারচুপি হলে নির্বাচন কমিশন শুধু প্রশ্নবিদ্ধ হবে তাই নয়, জনগণ তাদের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তাছাড়া অপ্রিয় হলেও সত্য অভাগা এই দেশে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী সফলতা-ব্যর্থতার সবটাই নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। কারণ জনযুদ্ধের চেতনা ছিল নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। সব পর্যায়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জনযুদ্ধের সে চেতনাকে বাস্তবরূপ দিতে হবে।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, এছাড়া সরকারের খেয়াল রাখা উচিত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা না হয়। তাই নির্বাচনের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার মূল দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। এ দায়িত্ব পালনে ক্ষমতাসীন সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর বিরোধী দলগুলোকেও নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সরকারকে প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা করার দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলেই এদেশে গড়ে উঠবে সুষ্ঠু নির্বাচনী সংস্কৃতি আর বাড়বে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনমনে শ্রদ্ধা ও আস্থা।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি কর্মী আনোয়ার ফরিদী, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ গোলাম নবী হোসেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক এম এম রাশেদ রাব্বি, শাজাহান কবির সুমন, সদস্য মো. মাসুদ আলম, মো. ছালেক-উর-রহমান (সুমন), নাট্যকার, নির্দেশক মাজহারুল হক পিন্টু, নাট্য সংগঠক দীন ইসলাম শ্যামল ও প্রজন্মের চেতনার শুভাকাক্ষী জাফর হোসেন প্রমুখ। এছাড়া কর্মসূচির শুরুতে কবি সাইদ তপু ‘মিথ্যেবলি’ শিরোনামে তার একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।