রাশিয়া বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাফল্যের মাস্টারমাইন্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। এই তথ্যটা বলে না দিলেও চলছে। তবে যেটা না বললেই নয় সেটা হল, সাউথগেট নিজেও বলেছেন তার একার কল্যাণেই এতদূর আসেনি ইংলিশরা। তার পেছনে আছে ছয় বিদেশি কোচের সুদূরপ্রসারী প্রভাব!
বিশ্বকাপের বাইরে ফুটবল বিশ্বকে মাতিয়ে রাখে পাঁচ ইউরোপিয়ান ফুটবল লিগ। আর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যেন সেসব লিগের নেতা। বিশ্বের বড় বড় কোচদের আগ্রহেও শীর্ষে থাকে ইপিএল।
ইপিএলের কোচদের নিয়ে বলতে গেলে সবার আগে আসবে যার নাম, তিনি পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটিকে দ্বিতীয় মৌসুমেই লিগ শিরোপা জিতিয়েছেন বার্সার সাবেক কোচ। কিন্তু লিগ শিরোপা তার মাহাত্ম্যের পুরোটা বোঝাতে পারছে না। ২০১০ সালে স্পেন ও ২০১৪ সালে যখন বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি, তখন গার্দিওলা ছিলেন যথাক্রমে বার্সেলোনা ও বায়ার্ন মিউনিখের কোচ। স্পেন ও জার্মানি বিশ্বকাপ জয়ী দলটিতে ছিল এ দুই ক্লাবের ফুটবলারদের ছড়াছড়ি।
এবারও বিশ্বকাপে না থেকেও তাই ভালোমতোই আছেন গার্দিওলা। তার ম্যানসিটির রাহিম স্টার্লিং, জন স্টোনস, কাইল ওয়াকার আছেন ইংলিশ দলে। আলোও ছড়াচ্ছেন। বিশ্বকাপ জিততে স্প্যানিশ গার্দিওলার আশীর্বাদ লাগবে, সেটা যেন এক প্রকার অলিখিত নিয়মই হয়ে উঠেছে! সাউথগেট নিজেও তা জানতেন। দায়িত্ব পেয়েই সবার আগে যোগাযোগ করেছিলেন ম্যানসিটি কোচের সঙ্গে। পরে মেসি-মুলারদের সাবেক কোচের প্রশংসায় বলেছেন, ‘গার্দিওলা হলেন একজন আবিষ্কারক।’
গার্দিওলার প্রশংসা করতে গিয়ে মউরিসিও পচেত্তনির ভুলে যাওয়ার কথা নয় সাউথগেটের। কারণ টটেনহ্যাম হটস্পারের কোচের কল্যাণেই এবার বিশ্বকাপ মাতাচ্ছেন হ্যারি কেন, ডেলে আলি, কাইরেন ট্রিপ্পার ও ড্যানি রোজ। কেনের কাঁধে আবার ইংলিশদের নেতৃত্ব, ৬ গোল করে গোল্ডেন বুটের বড় দাবিদারও তিনি।
পচেত্তনির আক্রমণাত্মক ফুটবল বড়ই পছন্দ সাউথগেটের। সেই কৌশল ধার করেছেন ইংল্যান্ড কোচ। বাকিটা তো সবারই জানা।
উপরের দুই কোচকে নিয়ে বললেই হবে না। আলোচনায় রাখতে হবে অ্যান্টনিও কন্তে, ইয়ুর্গেন ক্লপ, হোসে মরিনহো ও আর্সেন ওয়েঙ্গারকেও। যদিও ওয়েঙ্গার ইতিমধ্যে বিদায় বলে দিয়েছেন আর্সেনালকে। কিন্তু ফরাসি ভদ্রলোকের অবদান অস্বীকার করতে পারবে না ইংলিশ ফুটবল।
এই কোচদের দলে আলো ছড়ানো খেলোয়াড় ও তাদের ফর্মেশন-দর্শনের থেকে অনেককিছু নিয়েছেন সাউথগেট। সেভাবে খেলাচ্ছেন ইংল্যান্ড দলকে। খেলোয়াড়রা সেটা আয়ত্তে নিতে পারছেন দ্রুতই, কেননা ক্লাব কোচদের অধীনে ওভাবে খেলে আসায় সাউথগেটকে সেরাটা দিতে তাদের সুবিধা হচ্ছে। অকপটেই সেটা বলেন সাউথগেটও।
কন্তের কাছ থেকে ইতালিয়ান ছন্দ, ক্লপের কাছ থেকে জার্মান গতি, মরিনহোর পর্তুগিজ ভাবনা তাই সমৃদ্ধই করেছে ইংলিশ ফুটবলকে। ১৯৬৬ সালের পর যদি আবারও শিরোপা যায় ইংল্যান্ডের ঘরে, তবে তার কৃতিত্ব কেবল সাউথগেটেরই নয়। নেপথ্যের অবদান কিছুটা হলেও থাকবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোচদেরও।