সিলেটে বখাটের চাপাতির কোপে মারাত্মক আহত খাদিজা আক্তার নার্গিসকে আইসিইউ’র ভেতরে দেখতে গিয়ে সেলফি তোলা নেত্রীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার জবাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। ছবিগুলো সেলফি ছিল না দাবি করে সাবিনা আকতার তুহিন, এমপি বলেছেন, নারীসমাজ যে খাদিজার পাশে আছে সেটা বোঝানোর জন্যই তারা ছবিগুলো ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন।
সাংসদ তুহিন তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন: ‘আমার গতকালের স্ট্যাটাসের জন্য যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে এবং কেউ মর্মাহত হয়ে থাকেন আমি এ ব্যপারে দুঃখিত। আমি মেয়েটা মারা গেছে বলে যে গুজব ছড়িয়ে পরে আমার বান্ধবী মিরা স্ট্যাটাস দেয় বোন খাদিজা ক্ষমা করিস লিখে। আমাদের ছবি দেয়ার উদ্দেশ্য কেবল আমরা নারী সমাজ খাদিজার পাশে আছি এটা বোঝানোর জন্য আর ও বেঁচে আছে এটা জানানোর জন্য। আমার স্ট্যাটাসে বদরুলের ফাঁসি চেয়ে নির্মম ঘটনার নিন্দা করে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে। আমার যদি ভুল হয়ে থাকে তবে আমি ক্ষমা পার্থী। আমরা সব নির্যাতিত নারী সমাজের পাশে আছি থাকবো।’
স্কয়ার হাসপাতালে ওই ছবিগুলোতে এমপি তুহিনের সঙ্গে ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য অপু উকিল এবং যুব মহিলা লীগের নেত্রী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি।
অনলাইনে সমালোচনার মুখে মুক্তি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘অপু দিদি, তুহিনসহ আমার একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আসলে খাদিজাকে দেখতে যেয়ে তার অবস্থার কিছু তথ্য সবাইকে জানানোর অংশ হিসেবে যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছিল। তবে ছবিটা দেখে অনেকেই ভুল বার্তা পেয়েছেন। অনেকে ছবিটি দেখে মর্মাহত হয়েছে…. আমি খুবই দুঃখিত! সবাই বিষয়টা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন; দয়া করে ভুল ব্যাখা দিবেন না। আমাদের উদ্দেশ্য আসলে সে রকম কিছু ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছিলাম মানুষকে তার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানানোর।’
কারণ উল্লেখ করে তিনি আরো লিখেছেন, খাদিজাকে নিয়ে নানা জায়গা থেকে গুজব ছড়াতে থাকে খাদিজা মারা গেছেন এই বলে। কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অসীম করুণাময়ের কৃপায় বোনটি এখনো আমাদেরকে আশার আলো দেখিয়ে বেঁচে আছে। সৃষ্টিকর্তা বোনটিকে সুস্থ করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিক এটাই একমাত্র প্রার্থনা। আমরা মানবতার পক্ষে আর দোষী সন্ত্রাসীদের বিপক্ষে।’
নেত্রীরা এভাবে দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দিলেও তাদের অনেক সমর্থক ‘সেলফি কাণ্ডের’ পক্ষেই বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
রুবিনা মিরা নামে একজন লিখেছেন: ‘বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করতে হবে….. এটা যেন আজ নিয়মে এসে দাঁড়িয়েছে। একটা ছবি দেখেই কিছু মনগড়া কথা লিখে দিলেই যেন আহামরি কিছু হয়ে গেল!! অথচ ঐ ছবিটার পেছনের যে নিগূঢ় সত্য, ব্যথা – বেদনা সেটা কেউই চাক্ষুষ করলেন না। গতকাল আমি একটা স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম বোন আমাকে ক্ষমা কর……. এখানে কয়েকজন লিখেছেন…. খাদিজা এখনো বেঁচে আছে। তাই মানবতার জন্যই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম খাদিজাকে দেখতে…. ওর নির্যাতনের বীভৎসতা সহ্য করতে পারব না বিধায় আমি নিচে রয়ে গেলাম আর বললাম যেন ছবি তুলে আনে… যেহেতু গতকাল আমার ভুল হয়েছিল। এ জন্যই ছবিটা তুলেছিল।…… এই হল ঘটনার মূল, অথচ এটাকে নিয়ে এত নাটক শুরু করল প্রথম আলোসহ কিছু লোক!! আমি প্রশ্ন করতে চাই…. মানবতা আজ কোথায়?? যারা মরণাপন্ন মেয়েটার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়ে তার আরো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করল, তাদের কি অপরাধ,,,,,,,, বলবেন কি, সুধীসমাজ …….!?!?!?!?’
আরেক সমর্থক শাহীন রাকিব বলেছেন: ‘খাদিজাকে বুকে নিয়ে হাসপাতালে গেল এবং নিজের দেহের রক্ত দিল ইমরান সে ছাত্রলীগ নেতা। এটা আপনাদের চোখে পড়ে না। এটা নিয়ে পোস্ট দিতে কষ্ট লাগে। বদরুলকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিল ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা সেটা আপনাদের নজরে আসে না। সেই ভিডিও লিংক শেয়ার করতে বড় অনীহা আপনাদের। যুব মহিলা লীগের নেত্রীরা খাদিজা কে দেখতে গেল হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে সেলফি তুলেছে সেটা এখন আপনাদের খোরাক হয়ে গিয়েছে। খুউউব মজা খুঁজে বেড়ান তাই না? একজন কলেজের শিক্ষক তাকে ছাত্রলীগ বানাতে মজা লাগে খুব। বদরুল যখন কোপায় তখন খাদিজা কে উদ্ধার না করে ভিডিও করতে খুব ভালো লাগে তাই না? ইমরান যখন খাদিজাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় তখনো দাড়িয়ে দাড়িয়ে দৃশ্য দেখেন। যারা এত গন্ধ খুঁজে বেড়ান তারা কয়জন খাদিজাকে দেখতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে? কে কয় ব্যাগ রক্ত দিয়েছেন? বসে বসে ফেসবুকে সেলফির পোস্ট মেরে খুব ছিঃ ছিঃ করছেন ভালো কথা। আপনি নিজে কী করেছেন এই পর্যন্ত দেখান তো।’
তিনি আরো লিখেছেন: সারাক্ষণতো দেখছি ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর আওয়ামী লীগ এর গন্ধ খুঁজে বেড়ান?? জনাব নিজেরা কিছু করে দেখান তারপর অন্যের সমালোচনা করেন। অন্যেরটা ভালো ভাবেই বলা যায়, কষ্ট করে নিজে করে কিছু দেখানতো? যদি না পারেন তাহলে অফ যান। আপনাদের একেকজনের পোস্ট দেখে তো মনে হচ্ছে আপনারা যেন সব মক্কার কারী আর অন্যরা সব ধইঞ্চা?? আয়নায় নিজেদের মুখ দেখুন। দেখুন সেখানে কি দেখা যায়?’