দেশের প্রধান বিচারপতির হাত থেকে আইনজীবীর সনদ গ্রহন করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করেন তরুণ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম। তবে গর্বের এই অর্জন নিজ চোখে দেখতে না পেরে অনেকটা কষ্টের ভেতরে থাকেন দু-চোখের দৃষ্টি হারানো এই আইনজীবী।
শনিবার সকালে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জহিরুল ইসলামের হাতে আইনজীবীর সনদ তুলে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সনদ গ্রহনের পরই চ্যানেল আই অনলাইনের নিকট নিজের সংগ্রামী জীবনের টুকরো টাকরা গল্প তুলে ধরেন জহিরুল ইসলাম।
আইনজীবী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৩ সালে পাস করা ৩ হাজারের বেশি আইনজীবীকে আজ সনদ দেওয়া হচ্ছে। আমাকে দেশের প্রধান বিচারপতি নিজ হাতে সনদ তুলে দিলেন। আজ আমি গর্বিত। এটা আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।’ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে কথাগুলো বলার পরেই অনেকটা থেমে গেলেন জহিরুল। করুণ কন্ঠে বললেন, ‘আমার এই অর্জন আর আজকের এই আয়োজনে উপস্থিত সবাইকে যদি দু চোখে দেখতে পারতাম, তাহলে খুব ভালো লাগত। কিন্তু দু’চোখের দৃষ্টি নেই বলে আজ কিছুই দেখতে পেলাম না। তবু মাননীয় প্রধান বিচারপতির হাত থেকে আইনজীবীর সনদ নেয়ার অনুভূতিটা আমার কাছে জীবন্ত। এই অনুভূতি আমার সামনের জীবনে প্রেরণা যোগাবে।’
নিজের দৃষ্টিহীনতার স্মৃতি তুলে ধরে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যখন ছয় বছর বয়স তখন হঠাৎ অসুস্থ (হাম) হয়ে দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তারপর থেকেই শুরু হয় অন্ধত্ব নিয়েই আমার জীবন সংগ্রাম। একসময় ব্রেইল পদ্ধতিতে (আঙুলের স্পর্শ অনুভূতি ব্যবহার করে) লেখাপড়া শুরু করি। এসএসসি, এইচএসসি শেষ করে আইনে অনার্স ও মাস্টার্স করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দিয়ে ২০১৩ সালে আইনজীবী হই। আজ তারই সনদ পেলাম।’
পারিবারিক জীবনের কথা তুলে ধরে জহিরুল বলেন, ‘আমি যখন লেখাপড়া করি তখন আমার বাবা শ্রমিক আর মা গৃহিণী। চার ভাই বোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। জীবনে অনেক কষ্টের দিন কেটেছে। এখন নারায়ণগঞ্জ আদালতে আইন পেশায় যুক্ত আছি। দুই সন্তান, স্ত্রী আর পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জেই থাকি।’
দৃষ্টিহীনতা নিয়ে কিভাবে মামলা পরিচালনা করেন জানতে চাইলে জহিরুল বলেন, ‘আমার একজন সহকারী আছে। কোন মামলা এলে মামলার ঘটনা গল্পের মত করে প্রথমে শুনি। তারপর কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে যে ধারায় মামলাটা পরে সে ধারা অনুযায়ী ফাইল তৈরি করে আদালতে উপস্থাপন করি। তারপর আদালতে গিয়ে নিজেই মামলার শুনানি করি। আর নারায়ণগঞ্জ আদালতের আইনজীবী-বিচারক ও আদালত সংশ্লিষ্ট সবাই আমাকে সহযোগিতা করেন। এছাড়া আমার স্ত্রীও আমাকে সহযোগিতা করেন। সে আমাকে আইনের বই পড়ে পড়ে শোনায়।’
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বলে কম মামলা আসে উল্লেখ করে জহিরুল বলেন, ‘তুলনামূলক আমার কাছে কম মামলা আসে । কারণ, ‘অনেকেই মনে করেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী একজন আইনজীবী কীভাবে মামলা পরিচালনা করবে এবং সে মামলায় জিতবে? তবে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় জামিন করিয়েছি। আমার অনেক মক্কেলের পক্ষে মামলায় জিতে এসেছি।’