অপেক্ষা উন্মাদনার পাঠ চুকিয়ে চার বছর অন্তর আসে ফুটবল বিশ্বকাপ। যাকে ঘিরে স্বপ্ন বোনে মিলিয়ন ফুটবল সমর্থক। নিজেদের সেরা দাবি করে চলে তর্ক-বিতর্ক, কখনো গড়ায় হাতাহাতিতে। আরও একটি বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। মাঠে বসে প্রিয় দলকে সমর্থন যোগাতে ব্যাগ গোছাতে শুরু করেছে ভক্তরা। কাতারে কেমন দর্শক উপস্থিতি হতে পারে তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে আগের বিশ্বকাপগুলোর দর্শক সংখ্যার দিকে তাকালে। এপর্যন্ত দর্শক উপস্থিতিতে এগিয়ে কোন বিশ্বকাপ, মিলছে সেই পরিসংখ্যানও।
কাতারের টিকিট সংগ্রহে উত্তেজনার কমতি নেই ফুটবলপ্রেমীদের। টিকিট পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বলে আয়োজকরা খবর দিচ্ছে। এরইমধ্যে ৮ লাখ টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। টিকিট সংগ্রাহকদের মধ্যে এগিয়ে ভারতীয়রা। আট লাখের সংখ্যাটা শেষপর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেটাই এখন দেখার।
টিকিট বিক্রিতে এপর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে ১৯৯৪ আসর, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপ। সেবার ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি দর্শক উপস্থিতির সাক্ষী হয়েছিল আমেরিকার স্টেডিয়ামগুলো। ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় রোজ বোল স্টেডিয়াম ইতিহাসের সাক্ষী এখনো। যেখানে ফাইনালে ইতালিকে পেনাল্টিতে হারিয়ে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেছিল ব্রাজিল। মাঠে বসে সেদিন খেলা উপভোগ করেছিল লাখের উপর দর্শক। যা ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বাধিক দর্শক উপস্থিতির ম্যাচের একটি।
সব ছাপিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শক উপস্থিতির বিচারে অবশ্য এগিয়ে আছে ১৯৫০ ব্রাজিল বিশ্বকাপ। ব্রাজিল-উরুগুয়ের ফাইনাল ম্যাচে সেদিন মারাকানা স্টেডিয়াম হয়ে উঠেছিল জনসমুদ্র। ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জন সমর্থক সেদিন মাঠে বসে খেলা দেখেছিল। ব্রাজিলের বিশাল দর্শক উপস্থিতিও সেদিন ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেনি। ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেছিল উরুগুয়ে।
দর্শক উপস্থিতি বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের অবস্থান। ১২টি ভেন্যুতে সেবার ৩.৪ মিলিয়ন সমর্থক মাঠে বসে খেলা দেখার সুযোগ পেয়েছিল। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সবগুলো ম্যাচের গ্যালারি।
তিনে আছে ২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপ। দর্শক উপস্থিতির বিচারে এটি প্রায় ব্রাজিল বিশ্বকাপের কাছাকাছিই। চতুর্থ স্থানে ২০১০ সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপ। যেখানে ৩ মিলিয়নের অধিক দর্শক মাঠে উপস্থিত হয়েছে আসরজুড়ে। সবশেষ রাশিয়া বিশ্বকাপের অবস্থান তার পরেই। ৩ মিলিয়ন দর্শক মাঠে বসে খেলা উপভোগ করেছে। শেষ হাসি হেসেছিল ফরাসিরা।
কাতার বিশ্বকাপে কেমন দর্শক হতে পারে এমন প্রশ্ন যাদের, বলে রাখা ভালো পাঁচটি শহরের মোট ৮ ভেন্যুতে গড়াবে এবারের ম্যাচগুলো। একটি ভেন্যু থেকে অন্য ভেন্যুর দূরত্ব কম হওয়ায় চাইলে একদিনে দু’টো ম্যাচ উপভোগ করতে পারবে দর্শকরা। ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে সবগুলো স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছে দেশটি। অন্য যেকোনো বারের থেকে বেশি দর্শকের ম্যাচ দেখার সুযোগ করে দিতে আসন সংখ্যাও বাড়িয়েছে কাতার।
সর্বাধিক ৮০ হাজার দর্শক একসঙ্গে বসে ম্যাচ উপভোগ করতে পারবে। প্রয়োজনে আসন অরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে দেশটির। দর্শক টানতে আয়োজনের খামতি রাখছে না কাতার। সাথে বাড়তি হিসেবে দর্শকদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের আতিথেয়তার সুযোগ রেখেছে দেশটি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের কড়া ধর্মীয় অনুশাসন শেষপর্যন্ত তাতে প্রভাব না ফেললে কাতার বিশ্বকাপও গড়তে পারে উপস্থিতির রেকর্ড।