সিনেমা মানে নারীর গ্ল্যামার- বিশ্ব সিনেমায় এ ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। পাশের দেশ ভারতেও এই ধারণার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। নারী প্রধান সিনেমা নির্মাণ দিনকে দিন বাড়ছে।
দেশে ওটিটির বদৌলতে শুধু নায়ককেন্দ্রীক নির্মাণ কমতে শুরু করেছে- ওয়েব ফিল্ম হোক, কিংবা সিরিজ; সবখানেই নারী পুরুষ উভয়ের চরিত্রই সমানে সমান! তবে এই চর্চা সিনেমায় এখনও ততোটা সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে এফডিসি কেন্দ্রীক ছবিতে নায়কনির্ভরতা এখনো তুঙ্গে! ব্যতিক্রম অগ্নি, রক্ত কিংবা এরকম আরো কিছু মোটাদাগের ছবি। যদিও তা হাতে গোনা!
তবে প্রতি বছরেই বাংলায় উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি নির্মিত হয়, যে ছবিগুলোতে প্রধান চরিত্রে দেখা যায় নারীকে। এরকম ছবিগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক বাংলা সিনেমায় বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো ছবিগুলোর নাম থাকলো ফিচারে। যে ছবিগুলো প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও দেখেছে সফলতার মুখ…
রেহানা মরিয়ম নূর
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম এক নাম ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। যার মধ্য দিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবার অফিশিয়াল সিলেকশনে স্থান করে নেয় বাংলাদেশের কোনো ছবি। তরুণ নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের হাত ধরে আসে এই গৌরবান্বিত মুহূর্ত! প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এই সিনেমার গল্প। যেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবনযাপন করে। এরমধ্যে এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় রেহানা একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হয়। এরপর থেকে সে এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করতে শুরু করেন এবং ক্রমশ একরোখা হয়ে ওঠেন। কিন্তু একই সময়ে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরণের অভিযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তার সন্তানের জন্য ন্যায় বিচারের খোঁজ করতে থাকেন। যে চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন আজমেরী হক বাঁধন। এই ছবির জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও!
হাওয়া
২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া বক্স অফিস কাঁপানো মেজবাউর রহমান সুমনের ছবি ‘হাওয়া’। এক দল জেলের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার গল্পে নির্মিত হলেও শেষ পর্যন্ত ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন নারী! বেদের মেয়ে গুলতি। মাছ ধরতে গিয়ে জাল ফেলে জেলের সেই দলটি যাকে সমুদ্র থেকে নৌকায় তোলে! এরপর থেকে ট্রলারে রহস্যময় সব ঘটনা ঘটতে থাকে। তাদের জালে কোন মাছ ওঠে না এবং গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যায়। তার হাতেই একে একে শিকার হয় মাঝির দলের সদস্যরা! কেন জেলের এই দলটিকে গুলতির শিকারে পরিণত হতে হয়, তার পেছনে আছে করুণ আরেকটি গল্প! বেদের মেয়ে গুলতির চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজিফা তুষি।
শিমু
২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত আলোচিত ছবি ‘শিমু’। ২৩ বছর বয়সী যুবতী শিমুকে নিয়ে ছবির কাহিনী। ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। স্বভাবতই মালিকপক্ষের শোষণের শিকার হন। নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হন শিমু। তার সহকর্মীদের সাথে নিয়ে একটি ইউনিয়ন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যবস্থাপনার হুমকি এবং স্বামীর অসম্মতি সত্ত্বেও শিমুর এগিয়ে যাওয়া এবং লড়াইয়ের মানসিকতা উঠে এসেছে ছবিতে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু।
বিউটি সার্কাস
সার্কাসের মালিক ও প্রধান নারী যাদুশিল্পী বিউটির গল্প নিয়ে নির্মিত মাহমুদ দিদারের ছবি ‘বিউটি সার্কাস’। বিউটির যাদু প্রদর্শনীর কারিশমা আর রূপে পাগল এলাকার তিন প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিউটিকে নিজের করে পাবার প্রতিযোগিতায় নামে তারা। এতে এক সময় হুমকির মুখে পড়ে যায় পুরো বিউটির সার্কাসটি। কিন্তু কৌশলী বিউটি হাল ছাড়বার পাত্রী নয়। বুদ্ধির জোরে সে শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে ওঠে গভীর সংকট। বিউটির চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। এই ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারও অর্জন করেন জয়া।