২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি আসনের মধ্যে ২২ টি জিতেছিল তৃণমূল। ১৮ টি আসন জেতে বিজেপি, কংগ্রেস পায় মাত্র ২ টি আসন আর বামেদের বরাদ্দ ছিল শূন্য! সিপিআইএম মোট ভোটের মাত্র ৬ দশমিক ৩ শতাংশ পেয়েছিল।
এখানে মনে রাখা দরকার, বাংলায় সেবার বিজেপি যে ১৮ টি সিট পেয়েছিল তার মধ্যে ১৩ টি আসনে গড়ে দেড় লাখ করে ভোট আছে বামেদের।তিন বছর আগের বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্ট পেয়েছিল প্রায় ২৬ শতাংশ ভোট।
বিজেপির ভোট তখন ছিল ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ ।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বামেদের যে ১৫ শতাংশ ভোট ক্ষয় হয়েছে, তার সবটাই ঘরে তুলেছিল বিজেপি! বিধানসভার পরে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বাম ভোট কমে এসেছিল প্রায় ১৬ শতাংশে। শুধু বাংলায় নয়, ত্রিপুরাতেও প্রাসঙ্গিকতা হারাতে থাকে বামেরা একমাত্র কেরল ব্যাতিক্রম!
লোকসভা নির্বাচনে কীভাবে বামপন্থীদের সমর্থনে যাওয়া ভোট বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত শক্ত করল সেই প্রশ্ন ওঠেই!রাজ্যে তৃণমূলের ‘অত্যাচার’ থেকে মুক্তির যে ধুয়ো তুলেছিল বিজেপি, সেই এজেন্ডা খানিক কাজ করে যায়।কংগ্রেসের সঙ্গে জোট শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যাওয়াও বড় ফ্যাক্টর ছিল।আর গোটা রাজ্যবাসীর মনেই বামেদের নিষ্ক্রিয়তা এক বড় প্রভাব ফেলেছিল।সাংগঠনিক শক্তি হিসেবে বাংলাকে ভরসা দিতে পারেননি বামেরা।গ্রহণযোগ্য কোনও বিকল্প না থাকায় সংখ্যালঘুদের ভোটের বড় অংশ বাম ছেড়ে তৃণমূলের দিকে চলে যায়।
অবস্থা এমনই ছিল যে যাদবপুরে বিকাশ ভট্টাচার্য ছাড়া আর প্রায় কোনও বাম প্রার্থীই জামানত রক্ষা করার জায়গাতেও যেতে পারেননি!
২০১৯ সালের নির্বাচনে বামের ভোট রামে গিয়ে তৃণমূলের ভোট কমানোর খেলা হয়।এবার যদি বামের ভোট রামে না গিয়ে বামেই থাকে, তাহলে?তাহলে বিজেপির সমূহ বিপদ।নিজেদের ভোট নিজেদেরই পকেটে ধরে রাখা এবার বামেদের ক্ষমতায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।বামেরা সেই লক্ষ্যে দলগত পরিবর্তনও করেছে প্রচুর।
বুড়োদের দল বলে কটাক্ষ শুনে আসা বামফ্রন্টে এখন নতুন মুখের ভিড়। ২০২০ অর্থাৎ কোভিড পর্বে সারা বাংলা জুড়ে রেড ভলান্টিয়ার্স যেভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিল তাতে অনেকেই আশা করেছিলেন ছন্দে ফিরছে বামেরা।
২০২১-এর লোকসভা ভোটে অবশ্য সিপিএমকে দরকারে পেলেও সরকারে চায়নি মানুষ।কিন্তু রেড ভলান্টিয়ার্স হোক বা স্থানে স্থানে কমিউনিটি কিচেন, ভাতের লড়াইকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছিল বামেরাই।কোভিড পরবর্তী সময়ে যতবার পথে নামার আন্দোলন হয়েছে, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণ নেতারাই।বামফ্রন্টের সামনের সারিতে উঠে এসেছেন, মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়, প্রতীকূর রহমান, সৃজন ভট্টাচার্য্য, দীপ্সিতা ধর, কলতান ভট্টাচার্য, ময়ূখ বিশ্বাস, পৃথা তা-এর মতো তরুণ তুর্কিরা।
২০২১ সালের ভরাডুবির পরেই দলীয় নেতৃত্বের মুখ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে বামেরা।২০২২ সালে সিপিএম-এর নতুন রাজ্য সম্পাদক ঘোষণা করা হয় মহম্মদ সেলিমকে।রাজ্য কমিটি থেকে একে একে সরে দাঁড়ান সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু, রবীন দেব, মৃদুল দে, নেপালদেব ভট্টাচার্য, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও।তাঁদের জায়গায় নতুন রাজ্য কমিটিতে আসেন শতরূপ ঘোষ, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, মধুজা সেন রায়, গার্গী চট্টোপাধ্যায়, অনাদি সাউ, দেবলীনা হেমব্রম, কনীনিকা ঘোষের মতো নেতৃত্ব ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কি তরুণ ব্রিগেডকে নিয়ে বামেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারবেন মহম্মদ সেলিম?
ইন্ডিয়া জোটের শরিক হিসেবে কংগ্রেসের সঙ্গে রইলেও রাজ্যের তৃণমূলের সঙ্গে তো সমঝোতা সম্ভব নয়।কিন্তু কংগ্রেস আইএসএফের সঙ্গে জোট হলে বড় অংশের ভোট এবার বিজেপির হাতছাড়া হয়ে বামেদের শিবিরে ঢুকতেও পারে। আর জোট না হলে মরণপণ লড়াই করতে কি পারবে সিপিএম?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)